নয়াদিল্লি, ১৩ অক্টোবর – দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছেন ৬৬ বছর বয়সী জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা বাবা সিদ্দিকি। এই ঘটনাতেও ফের জেলবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নাম উঠে এল। মুম্বাই পুলিশ যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে, তারা লরেন্সের গ্যাংয়ের সদস্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাবা সিদ্দিকিকে খুনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগেই। গত ২৫-৩০ দিন ধরে রেকি করে তারা। শেষ পর্যন্ত শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে গুলি করে খুন করে বাবা সিদ্দিকিকে। রাজনৈতিক মহলে বেশ প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। ফলে এই ঘটনায় মায়ানগরীর পরিবেশ থমথমে। অভিনেতা সালমান খানের বাড়ির বাইরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ এর আগে, তাঁকে খুনের চেষ্টাও চালিয়েছে লরেন্সের গ্যাং। শনিবার গভীর রাতে লীলাবতী হাসপাতালে গিয়ে সমবেদনা জানাতে প্রয়াত সিদ্দিকের পরিবারের সাথে দেখা করেন সালমান খান।
শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে বান্দ্রা ওয়েস্ট এলাকায় বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। ছেলের অফিসের বাইরে তাঁকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে ছয়টি গুলি চলে, যার মধ্যে চারটি তাঁর বুকে বেঁধে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এসআইটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পূজার আতশবাজিতে যখন মুখরিত চারিদিক, সেই সময়ই গুলি করা হয় বাবা সিদ্দিকিকে। মোট তিন দুষ্কৃতী এই কাজে যুক্ত ছিল বলে দাবি পুলিশের। এর মধ্যে ২৩ বছরের গুরমেল বলজিৎ সিংহ এবং ধর্মরাজ কাশ্যপকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। গুরমেল হরিয়ানা এবং ধর্মরাজ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তৃতীয় জন শিব কুমার গৌতম গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশের ধারণা, এই তিনজনকে সমন্বয় করছিলেন আরেক ব্যক্তি, তিনিও পালিয়ে গেছেন।
এনডিটিভি লিখেছে, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে কুখ্যাত বিষ্ণোই গ্যাং।
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি। বিলাসরাও দেশমুখ সরকারের খাদ্য, নাগরিক পরিষেবা এবং শ্রম মন্ত্রী ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে পাঁচ দশকের সম্পর্ক ত্যাগ করে অজিত পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেন বাবা সিদ্দিকি। ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও পেতেন বাবা সিদ্দিকি। কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বলিউড এবং শিল্পমহলেও বেশ কদর ছিল বাবা সিদ্দিকির। অভিনেতা শাহরুখ খান, সালমান খানের সঙ্গেও দহরম মহরম ছিল তাঁর। এমনকি তাঁর মধ্যস্থতাতেই শাহরুখ ও সালমানের মধ্যে বিবাদ মেটে বলে জানা যায়।
এর আগে সালমানকে খুনের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি, তাঁর বাড়ির বাইরেও গুলি চালায় লরেন্স গ্যাং। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের আরাধ্য কৃষ্ণসার হরিণ খুন মামলার জেরেই সালমান লরেন্সের হিটলিস্টে উঠে আসে বলে জানা যায়। যদিও সালমানের থেকে মোটা টাকা আদায়ও লরেন্সের লক্ষ্য হতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। এই আবহেই বাবা সিদ্দিকি খুন হলেন।
লরেন্স এই মুহূর্তে জেলে বন্দি। কিন্তু জেল থেকে ভিডিও কলে সংবাদমাধ্যমেও আবির্ভূত হয়েছে সে, আবার হুমকি বার্তাও পাঠিয়েছে। গত এপ্রিল মাসেই তার গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরা সালমানের বাড়ির বাইরে গুলি চালায়। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন ধৃত একজনের মৃত্যুও হয়। বাবা সিদ্দিকির উপর হামলায় সেই ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, লরেন্স জেলে থাকলেও, আমেরিকা থেকে আরও তিন জন গ্যাংটি চালাচ্ছে। এর মধ্যে একজন হল, লরেন্সের ভাই আনমোল বিষ্ণোই। আনমোলের নির্দেশেই সালমানের বাড়ির বাইরে গুলি চলে। গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের নাম জড়ায় পাঞ্জাবের শিল্পী সিধু মুসেওয়ালার খুনে। আর এক গ্যাংস্টার রোহিত গোদারও সালমানকে খুনের চেষ্টায় যুক্ত। দিল্লির পুলিশের একটি দল মুম্বাই এসে পৌঁছেছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল প্রধানদের মতে, মুম্বাইয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতেই বাবা সিদ্দিকিকে খুন করেছে লরেন্স গ্যাং।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৩ অক্টোবর ২০২৪