এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
অবস্থান করছেন দত্তক নেওয়া মা-বাবার সাথে। জানার পর থেকে খোঁজের চেষ্টা করেন জন্মদাতা মা-বাবাকে। একপর্যায়ে জানতে পেরেছেন, তিন বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধু লিস্টে রয়েছে নিজের বাবা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই কিশোরীর নাম তমুনা মুসরিজ। তিনি পশ্চিম জর্জিয়ার জুগদিদিতে বসবাস করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে তাকে দত্তক নেওয়া মায়ের মৃত্যুর পর তিনি তার জন্মদাতা মা-বাবাকে খুঁজতে শুরু করেন। মূলত তখন থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন তার প্রকৃত মা-বাবা তারা নন।
২০১৬ সালে তার দত্তক নেওয়া মায়ের মৃত্যুর পর, একদিন ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে তার জন্ম নিবন্ধনের একটি কার্ড খুঁজে পান। যেখানে তার জন্ম তারিখ ভিন্ন ছিল। পরবর্তীতে তিনি অনুসন্ধান করে জানতে পারেন এই পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছেন। তখন থেকে তিনি প্রকৃত মা-বাবাকে খুজঁতে শুরু করেন।
প্রথমে তিনি ফেসবুকে ‘ভেদজেব বা আমি অনুসন্ধান’ করছি নামে একটি গ্রুপ খুলেন। এরপর তিনি এই গ্রুপের সাহায্যে একটি বড় প্রতারকচক্রেরও মুখোশ উন্মোচণ করেন।
জর্জিয়ায় সেই শিশু পাচার গ্রুপটি বহু বছর যাবৎ হাজার হাজার শিশু মারা গেছে বলে, অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিতেন। এই ঘটনাটি ব্যাপকভাবে মানুষের জীবনে প্রভাবিত করেছিল এবং বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
তমুনা তার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে শত শত পরিবারকে একত্রিত করেছেন। তবে তখনও নিজের পরিবারের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তমুনা। একপর্যায়ে তিনি ধরে নিয়েছিলেন, তিনি হয়তো ছোটবেলায় চুরি হয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এই গল্পে একজন সাংবাদিক ছিলাম, তবে এটি আমার জন্যও একটি ব্যক্তিগত মিশন ছিল।’
অবশেষে তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে একটি বার্তা পান। বার্তাটি এমন একজনের কাছ থেকে পেলেন, যিনি গ্রামীণ জর্জিয়াতে বসবাস করতেন। বার্তায় সেই নারী বলেন, আমি এমন একজন নারীকে চিনি, যিনি ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিবিলিসিতে গর্ভাবস্থা লুকিয়েছিলেন এবং এক মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। আর সেই তারিখটির সাথে তমুনার জন্ম তারিখের মিল রয়েছে।
বার্তায় তিনি এও উল্লেখ করেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন, ওই নারী তনুমার জন্মদাতা মা হবেন। এছাড়াও বার্তায় তিনি ওই নারীর নাম উল্লেখ করে তমুনাকে পাঠান।
তমুনা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করেন কিন্তু কোথাও খুঁজ পাননি। একপর্যায়ে তিনি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ‘তাকে কেউ চেনে কি-না’ জানতে চেয়ে পোস্ট করেন।
তার পোস্ট থেকে একজন সাথে সাথে তমুনাকে বার্তা পাঠান। বললেন, যে নারী গর্ভাবস্থা গোপন করেছিলেন, তিনি তার নিজের খালা। তিনি তমুনাকে পোস্টটি নামিয়ে নিতে বললেন। তবে তিনি ডিএনএ পরীক্ষা করতে রাজি হন।
একপর্যায়ে এক সপ্তাহ পর ডিএনএ ফলাফল আসে এবং তিনিই তমুনার মা বলে শনাক্ত হন। তখন তমুনা তার বাবার বিষয়ে জানতে চান। এবং তার মা নাম প্রকাশ করতে রাজি হন। তার নাম ছিল গুরগেন খোরাভা।
তমুনা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন তার বন্ধু লিস্টে গুরগেনের নাম ছিল, তিনি দ্রুত তাকে ফেসবুকে ট্র্যাক করেছিলেন। দেখা গেল, গুরগেন নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গল্পটি অনুসরণ করছিলেন।
তমুনা অবাক হয়ে দেখলেন যে, তার বাবা অর্থ্যাৎ গুরগেন ‘তিন বছর ধরে তার বন্ধু তালিকায় ছিল’। তবে তিনিও বুঝতে পারেননি যে এটাই তার গল্পের একটি অংশ।
তমুনা বলেন, এটি যেমন আমার জন্য বিস্ময় ছিল, ঠিক তেমনি উনার জন্যও বিস্ময়ের ছিল। উনিও বুঝতে পারেননি যে, উনি আমার এই গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।