শিশুদের ক্যানসার- এই শব্দটি শুনলেই বুকের ভেতর কেমন যেন এক হাহাকার ঝড় তোলে। অথচ এ এক নির্মম বাস্তবতা। বড়রাই শুধু নয়, ছোটরাও ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের বেশ কয়েকটি ক্যানসারের আশঙ্কাও আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতিবছর সারাবিশ্বে অন্তত তিন লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর এ সংখ্যাটি নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তুলনামূলক বেশি। আর এ দেশগুলোতে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। অথচ সঠিক চিকিৎসায় ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
শিশুদের ক্যান্সার নিরাময়ে কিছু বিষয় জানা ও সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের কোন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে, কোন উপসর্গগুলো দেখলে সচেতন হবেন, প্রতিরোধে কী করবেন- এগুলো ক্যানসার মোকাবিলায় জানা অবশ্য কর্তব্য।
শিশুর ক্যানসারের অন্যতম হল রক্তের ক্যানসার বা লিউকোমিয়া। হঠাৎ হঠাৎ জ্বর,সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ ছোটদের ক্যানসারের মধ্যে এই লক্ষণগুলিও রয়েছে। এছাড়াও বারবার ভাইরাল সংক্রমণে কাবু হয়ে পড়াও শিশুদের জন্য মোটেই ভালো নয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ছোটদের ক্যানসার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যায়। তবে এক্ষেত্রে যত দ্রুত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে তত দ্রুত চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় ঢোকা সহজ। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় বিষয়টি খুবই জরুরি।
শিশুদের ক্যানসারের বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ এন্ড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহিদা আলম এমবিবিএস, এফসিপিএস (অনকোলোজি) জানান, চিকিৎসকদের কাছে শিশুর ক্যানসার চিনতে পারা একটি চ্যালেঞ্জ। এর কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ক্যানসার এর উপসর্গগুলো সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির মতো কিছু লক্ষণ দিয়ে শুরু হয়। তাই আসল রোগ বুঝে চিকিৎসা শুরু করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। আর এই দেরিতেই বাড়ে রোগের জটিলতা। তখন চিকিৎসাও ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ে।
ডা. শাহিদা আলম সারাবাংলাকে বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু রোগ লক্ষণ দেখলে শুরুতেই সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন-
১. শিশুর মাঝে মাঝেই জ্বর, সর্দি ও কাশি হওয়া। সাধারণত বিভিন্ন সময়ে শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশি হতেই পারে। কিন্তু ক্যানসারের ক্ষেত্রে সাধারণ চিকিৎসায় এসব সাধারণ রোগ সারে না। দুই এক সপ্তাহ পর পর ফিরে আসে।
২. হঠাৎ খাবারে অরুচি। এক্ষেত্রে শিশু খাওয়া দাওয়া করে না, ক্রমাগত ওজন কমে যায়, শিশু কান্নাকাটি করে, খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়। তাই শিশু যদি খাবারের প্রতি অরুচি দেখায়, কোন কিছুই খেতে চায় না এবং এই সমস্যা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তার পর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে দেহের ওজন কমে যায়- তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে পরীক্ষা করাতে হবে।
৩. শিশুদের ক্যানসারের আরেকটি লক্ষণ ধারাবাহিক ক্লান্তি। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই মাথা ঝিমঝিম, মাথার ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়। শিশু খেলাধুলায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ঘন ঘন পানির পিপাসা পায়, মুখ শুকিয়ে যায় ও শিশু প্রচন্ড ক্লান্ত অনুভব করে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এ লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
৪. দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া। শিশুদের ক্ষেত্রে হঠাৎ পড়ে গিয়ে রক্ত পড়া হিসেবে এটি অনেকে দেখেন। কিন্তু ঘন ঘন এটি ঘটতে থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি। সাধারণত রক্তে প্লেটলেট কমে গেলে এ লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
৫. ক্যানসারের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ শরীর ক্রমশ ফুলে যাওয়া। শরীরের গিঁটে ও নানা অঙ্গে ব্যথা। এটি হঠাৎ হাতে-পায়ে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর শরীরে কোথাও যদি অনেকদিন ধরে ব্যথা থাকে এবং সেটি না সেরে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
The post বাড়ছে শিশুদের ক্যানসার, কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.