চলতি বছরের মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে কারা হেফাজতে বম জাতিগোষ্ঠীর তিন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৫৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
একই সঙ্গে নিরপরাধ বম নাগরিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার ১ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন এই দেড় শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে তিনটি মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ১৭ জুলাই ভান লাল রুয়াল বম (৩৫), ৩১ মে লাল সাংময় বম (৫৫) এবং ১৫ মে লাল থে্লং কিম বমের (২৯) কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, লাল থে্লং কিম বম ও ভান লাল রুয়াল বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে তাঁদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গত ৩১ মে ক্যানসারে আক্রান্ত লাল সাংময় বম (৫৫) প্রাণ হারানোর শেষ মুহূর্তে জামিন পেয়েছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই তিনটি মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মনে করি যে, এই ৩ নাগরিক কারাবন্দী অবস্থায় সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের পরিবারের দাবি, তাঁরা কেউই কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) সংশ্লিষ্ট বা অপরাধী ছিলেন না।
অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, এর ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। অথচ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একজন অপরাধীরও জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয় ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার শিউলি বম থ্যালাসামিয়ায় আক্রান্ত হলেও বান্দরবানের নিম্ন আদালতে তিনি জামিন পাননি। সর্বশেষ ২৮ জুলাই উচ্চ আদালতে শিউলিসহ ১১ জন নারীর জামিন আবেদনের শুনানি হলেও জামিন মেলেনি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন হলেও রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে তা আটকে গেছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
বর্তমানে কারাগারে একাধিক নারী-পুরুষ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে বছরের পর বছর রাষ্ট্রের নাগরিকেরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না।
বিবৃতিতে কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, অবিলম্বে নিরপরাধ বম নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়–বিক্রয়, জুমচাষ ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বন্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর ‘কালেকটিভ পানিশমেন্ট (গোটা জাতিগোষ্ঠীকে শাস্তি)’ বন্ধ করা ও বন্দী বম নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, খুশী কবির, শাহীন আনাম, আনু মুহাম্মদ, শামসুল হুদা, রেহনুমা আহমেদ, ইফতেখারুজ্জামান, জেড আই খান পান্না, শিরীন পারভীন হক, সুমাইয়া খায়ের, শহিদুল আলম, রাজা দেবাশীষ রায় প্রমুখ।