বন্ধুত্বের ভালোবাসায় গড়া বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস – আনন্দ আলো

বন্ধুত্বের ভালোবাসায় গড়া বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস – আনন্দ আলো

বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন, বন্ধুত্ব মানে আস্থা আর নির্ভরতা। কেউ বলেন বিপদে আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই প্রকৃত বন্ধু। আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সব কিছু। প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে, যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখী। হ্যাঁ, জীবন গড়ার ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক। এই বাস্তবতায় ওরা দুজন স্থপতি অমিত কুমার সাহা ও স্থপতি ফয়সাল ইশতিয়াক আলম বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন। বুয়েট এ পড়াকালীন দুজনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। একসাথে কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেন তারা। সেই থেকে আজও তাদের বন্ধুত্ব অটুট। সুখে-দুঃখে দুজন দুজনের পাশে এসে দাঁড়ান। স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করতে চান দুজন মিলেই। শুদ্ধ স্থাপত্য চর্চা, স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের জন্য স্থাপত্য এই বিশ্বাস দুই বন্ধুর মাঝে তৈরি হয় স্থাপত্য শিক্ষার সময়কালে। দুজনেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। তাদের রয়েছে বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করেছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি তে এই স্থপতিদ্বয়কে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি অমিত কুমার সাহা’র গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। সেখানেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবার নাম অরুন কুমার সাহা। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা শিপ্রা সাহা গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে স্থপতি অমিত মেঝ। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাআঁকির প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। ছবি আঁকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। দাদাবাবু নিলয় সাহা’র অনুপ্রেরণা এবং সৃজনশীল কাজ করার উদ্দেশ্যেই স্থপতি হওয়া তাঁর।
মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৫ সালে তিনি ব্যাচেলার অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন।
স্থপতি ফয়সাল ইশতিয়াক আলমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। সেখানেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাবা প্রফেসর ড. এম. বদিউল আলম ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। মা (মৃতঃ) হাসমত আরা বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে স্থপতি ইশতিয়াক মেঝ। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। হকি ভালো খেলতেন। বুয়েট হকি দলের খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ১৯৯৫ সালে ও ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৫ সালে স্থপতি অমিত কুমার সাহা ও স্থপতি ফয়সাল ইশতিয়াক আলম দু’জনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পাস করার পর তারা গড়ে তোলেন “বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতিদ্বয়।


সম্পর্কিত

স্থপতি অমিত কুমার সাহা ও স্থপতি ফয়সাল ইশতিয়াক আলম

ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ এর বেশি স্থাপনার নকশা করেছে। এর মধ্যে ৫০ টিরও বেশি বহুতল ভবন রয়েছে। প্রায় ১০টি রয়েছে মসজিদ। “বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস” এর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে “মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ”, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এম ব্লকে “স্কাই ভিস্তা” “আস্থা” “মনিরা মঞ্জিল”, কে ব্লকে “গল্পগৃহ” এন ব্লকে “পারভেজ ভিলা” সহ আরো অনেক প্রকল্প, চট্টগ্রামে ১৪ তলা মিক্সড ইউজ বিল্ডিং “জে এম লেভেন্তে”, জলসিঁড়ি আবাসনে “চৌধুরীস ভেলভেট ভিস্তা” “শিউলিস গার্ডেন”, চট্টগ্রামে ‘বিবি মরিয়ম জামে মসজিদ’ জে বটতলী ‘বায়তুল হামদ হাশেমী শাহী জামে মসজিদ’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিচার্স এসোসিয়েশন ভবন’, কক্সবাজারে ‘হোটেল কক্স টাইটান’, কক্সবাজারে ‘হোটেল কক্স রোটানা’, চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস বিল্ডিং , মোহাম্মদপুরে ১৪ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ‘বৃষ্টি বিলাস’, তেজগাঁও স্টেশন রোড এ ১৪ তলা মিক্সড ইউজ বিল্ডিং ‘মহল’, উত্তরায় ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ‘স্বপ্নীল’ সহ বেশকিছু প্রকল্প। ফেনীতে ২০ তলা মিক্সড ইউজ বিল্ডিং, সিরাজগঞ্জে ১২ তলা আবাসিক ভবন, রাজশাহীতে বেশ কয়েকটি ১০ তলা আবাসিক ভবন সহ বর্তমানে বেশ কয়েকটি নতুন এবং দৃষ্টিনন্দন নকশার কাজ চলমান এ প্রতিষ্ঠানটিতে।
স্থপতিদ্বয় বলেন, বাস্তুভিটা আর্কিটেক্টস শুরু থেকেই সাধারণত আধুনিক এবং টেকসই স্থাপত্যচর্চা করে থাকে, যেখানে নান্দনিকতা, ব্যবহারিকতা এবং পরিবেশ সচেতনতা একসাথে কাজ করে। আমাদের নকশায় আমরা স্থানিক অভিজ্ঞতা, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল এবং স্পেস এর উপযোগিতা এই উপাদানগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করি।
স্থপতি হিসেবে আমাদের কাজের বৈশিষ্ট্য:
টেকসই ও প্রাসঙ্গিক নকশা: স্থানীয় জলবায়ু, উপকরণ ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপত্য নির্মাণ।
মানবকেন্দ্রিক চিন্তা: ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে স্থাপত্য গড়ে তোলা।
প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার: ডিজিটাল টুলস ও প্রযুক্তির সাহায্যে অধিক কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব সমাধান প্রদান।
তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে এই স্থপতিদ্বয় বলেন, স্থপত্য শুধু পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব ও সৃজনশীল যাত্রা। আপনি যেখানেই কাজ করুন না কেন, নিজের চিন্তা, মূল্যবোধ এবং সমাজের চাহিদার মধ্যে সেতুবন্ধন nirmane ami Logoতৈরি করুন। ভিন্নভাবে চিন্তা করতে ভয় পাবেন না। ভুলের মধ্যেই শেখার পথ খোলা থাকে। স্থপতি হিসেবে প্রতিটি রেখার পেছনে একটি দায়িত্ব এবং প্রতিটি প্রকল্পের মধ্যে একটি সম্ভাবনা থাকে, সেই সম্ভাবনাকে সাহসের সাথে আলিঙ্গন করুন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা বলেন, আমরা ভবিষ্যতে এমন স্থাপত্য চর্চা করতে চাই যা শুধু একটি কাঠামো নয়, বরং একটি জীবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে- যেখানে মানুষ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির সাথে সহাবস্থান করতে পারে। এছাড়াও অধিক মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।

Scroll to Top