জিতলে ইতিহাস গড়ত বাংলাদেশ। শ্রীলংকার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ইতিহাস হতো। বাজে ব্যাটিংয়ে ইতিহাস গড়া হয়নি। আগে ব্যাটিং করতে নেমে ২৮৫ রান তোলে শ্রীলংকা। পরে বাংলাদেশ ১৮৬ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৯৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছে।
এই হারে সিরিজ হার নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিতেছিল শ্রীলংকা, দ্বিতীয়টি জিতে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আজকের তৃতীয় ম্যাচটা ছিল সিরিজ নির্ধারনী। বড় ব্যবধানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল শ্রীলংকা।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পাল্লেকেলেতে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেটটা বড়ই ছিল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আড়াইশর কম রান করে জিতেছিল দুই দলই। সেখানে আজ শ্রীলংকা ২৮৫ রান তুলে ফেললে সেটা পেরুনো সহজ ছিল না। তবে একেবারে বিশাল টার্গেটও নয়। আধুনিক ওয়ানডেতে যেখানে নিয়মিত তিনশ হতে দেখা যায়।
প্রতি ম্যাচের মতো আজও বাংলাদেশের হয়ে ঝড়ো শুরু করতে চেয়েছিলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তবে গত ম্যাচের মতো আজও ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম। ১৩ বলে ৩ চারে আউট হয়েছেন ১৭ রান করে। পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত শূন্য রানে আউট হলে আরও চাপে পরে বাংলাদেশ।
সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে বড় একটা জুটি দরকার ছিল বাংলাদেশের। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয় চেষ্টা করেছেন বটে, তবে তাদের ৫৮ বলে ৪২ রানের জুটি সেই দাবি মেটাতে পারেনি। আগের ম্যাচে দারুণ একটা ইনিংস খেলা ইমন ৪৪ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করে ফিরলে এই জুটি ভাঙে।
অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ফিরেছেন দলীয় একশ হওয়ার পরপরই। ২৫ বলে ৪টি চার ১টি ছয়ে মিরাজ যখন ২৮ রান করে ফিরছিলেন বাংলাদেশ তখন ১০৫/৪। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে জয় থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে গেছে বাংলাদেশ।
ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র ফিফটি পাওয়া তাওহিদ হৃদয় ৫১ রান করতে বল খেলেছেন ৭৮টি। শেষ দিকে জাকের আলী অনিক ৩৫ বলে ২টি চার ১টি ছয়ে ২৭ রান করে হারের ব্যবধান কমাতে পেরেছেন।
বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেছে ৩৯.৪ ওভারে ১৮৬ রানে। শ্রীলংকার হয়ে আসিথা ফার্ন্দান্দো ও দুশমান্তা চামিরা তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে কুশাল মেন্ডিসের সেঞ্চুরিতে ২৮৫ রানের বড় স্কোর গড়েছে শ্রীলংকা। বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট পায় বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিবের দারুণ এক ইনসুইং বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন নিশান মাদুষ্কা।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শক্ত একটা জুটি গড়েন লংকান দুই টপ অর্ডার ব্যাটার কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কা। সেই জুটিটা ভেঙেছেন তরুণ স্পিনার তানভীর ইসলাম। রানের তোলার গতি দ্রুত করতে গিয়ে তানভীরকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। কিন্তু টপ এ্যাজ হয়ে বল চলে যায় পারভেজ হোসেন ইমনের হাতে। ৪৭ বলে ৪টি চারে ৩৫ রান করে ফিরেছেন নিশাঙ্কা।
এরপর কামিন্ডু মেন্ডিসকে নিয়ে এগুচ্ছিলেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু কামিন্ডুকে বেশিদূর এগুতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩ চারে ১৬ রান করা কামিন্ডুকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। এরপর কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে দারুণ একটা জুটি গড়েন অধিনায়ক চারিথ আশালাঙ্কা।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১৭ কলে ১২৪ রান তোলেন দুজন। এই দুজন যেভাবে খেলছিলেন মনে হচ্ছিল তিনশ বুঝি ছাড়িয়েই যাবে শ্রীলংকা। কারণ হাতে উইকেট ছিল পর্যাপ্ত আবার সেট ব্যাটারও ক্রিজে। যা শেষ ১০ ওভারে ঝড় তোলার জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি। কিন্তু শেষ দশ ওভারে টপাটপ উইকেট তুলে নিয়ে লংকানদের লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশি বোলাররা।
দলীয় ২২৪ রানের মাথায় ৬৮ বলে ৫৮ রান করা চারিথ আশালাঙ্কাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। দলীয় ২৪৯ রানের মাথায় মেহেদি হাসান মিরাজের ওভারে হিট উইকেট হন জানিথ লিয়ানগে। সেই থেকে মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে সেঞ্চুরিয়ার কুশল মেন্ডিস ও ওয়েলাগেকেও ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কুশল মেন্ডিস ১১৪ বলে ১৮টি চারের সাহায্যে ১২৪ রান করেছেন।
৫০ ওভারে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রানে থেমেছে শ্রীলংকা। কুশল মেন্ডিস ১১৪ বল খেলে ১৮টি চারের সাহায্যে ১২৪ রান করেছেন। শেষ দিকে ১৪ বলে ১৮ রান করেছেন হাসারাঙ্গা।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ ৪৮ রানে ও তাসকিন আহমেদ ৫১ রানে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। একটা করে উইকেট পেয়েছেন তানভীর ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী।