বছরের শ্রেষ্ঠ রাত

বছরের শ্রেষ্ঠ রাত

জহির উদ্দিন বাবর

ইসলামের দৃষ্টিতে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এই রাতটি কবে তা সুনির্দিষ্ট করে কোথাও বলা নেই। রমজানের শেষ দশকের যেকোনও বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর এটা নিশ্চিত। তবে হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মহিমান্বিত এই রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে কয়েকটি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ এই শবে কদর। পবিত্র রমজানের এই রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিচে আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়।

কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কোরআন নাজিলের কারণেই শবে কদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই কোরআন আমি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি।’

এ রাতের তাৎপর্য বর্ণনা করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন।’ (সুরা কদর)

অসংখ্য হাদিসে শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ইমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি) রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরো রমজান, বিশেষত রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। পরিবার- পরিজন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তিনি বললেন, তুমি এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়বে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউব্বুন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি’ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’

লাইলাতুল কদর উম্মতে মোহাম্মদির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর কোনও নবীর উম্মতকে এই ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগের যুগের উম্মতেরা অনেক আয়ু পেতেন। সে জন্য তারা অনেকদিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় উম্মতে মোহাম্মদির আয়ু নিতান্তই কম। এ জন্য আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ দয়ায় মহানবীর (সা.) উম্মতকে মহিমান্বিত এই রাত দান করেছেন। যারা এই রাতে ইবাদত করে কাটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। এ রাতে নির্দিষ্ট কোনও ইবাদত নেই।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ- তাহলিল, দান- সদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যে কোনও ইবাদত করলে অভাবনীয় প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের অত্যন্ত ভালোবাসেন। তিনি চান প্রত্যেক বান্দা যেন পূত- পবিত্র হয়ে তার দরবারে হাজির হয়। বান্দাদেরকে গোনাহ ও পাপমুক্ত করার জন্য লাইলাতুল কদর একটা বিশেষ উপলক্ষ। এটাকে যারা কাজে লাগাবে তারা সফল। আর যারা অবহেলা করবে তারা বড়ই দুর্ভাগা।

আসুন, আমরা দুর্ভাগাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাই এবং সফল বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা রাখি। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top