এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিজিটাল মাধ্যমে বেড়েছে ভুল তথ্য, ছবি এবং ভিডিও প্রচার। বর্তমান সময়ে ভুয়া সংবাদ এবং ভুয়া তথ্য এড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে থেকেও ফ্যাক্ট চেক পদ্ধতি বন্ধ ঘোষণা করেছে ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক পদ্ধতি বন্ধ ঘোষণা করে এই প্রোগ্রামের পরিবর্তে তারা চালু করছে ‘কমিউনিটি নোটস’ নামে একটি নতুন ব্যবস্থা, যা ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স-এর মডেলের অনুরূপ।
মেটার নতুন এই কমিউনিটি নোটস মডেলে ব্যবহারকারীরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং থ্রেডসের পোস্টে ভুল তথ্য বা ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকলে তা চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা সংযুক্ত করার সুযোগ পাবেন। ফলে স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আর থাকবে না।

তথ্য যাচাই করা এবং জাল তথ্য এড়াবের যেভাবে:

যৌক্তিকভাবে চিন্তা করুন: অনলাইনে যা কিছু শেয়ার করা হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে ব্যবহারকারীদের তথ্য মূল্যায়ন করতে হবে। যদি কোনো পোস্ট রাগ বা ভয়ের মতো অনুভূতি প্রকাশ করে, তবে এটি একটি সতর্কতা সংকেত। ব্যবহারকারীদের অবশ্যই আরও তদন্ত করে তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমকে বিশ্বাস করবেন না: সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই ভুয়া নিউজ ছড়ায়। কারণ সাধারণ মিডিয়ার তুলনায় সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধতা কম তাই অল্প সময়ে যেকোনো তথ্য ছড়িয়ে পরে। অনেক ‘লাইক’ এবং ‘শেয়ার’ থাকলেই সেই তথ্যতে বিশ্বাস করবেন না।
সত্যের জন্য এআইকে বিশ্বাস করবেন না: তথ্য ক্রস-চেক করতে মেটা এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের দ্বারা ব্যবহৃত এআই বটগুলোর সাহায্য নেবেন না। যদি কেউ গুগল সার্চ ব্যবহার করে থাকে, তাহলে তাদের অবশ্যই এআই ওভারভিউ সেকশন ব্যবহার করতে হবে।
মূল উৎস সন্ধান করুন: অবশ্যই তথ্যের মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। গুগল নিউজ এবং অ্যাপল নিউজের মতো অ্যাগ্রিগেটররা বেশিরভাগই তাদের তথ্যগুলো আসল উৎস থেকে পেয়ে থাকেন।
ফ্যাক্ট-চেকিং সাইটগুলো ব্যবহার করুন: FactCheck.org এবং PolitiFact এর মতো বেশ কিছু তথ্য-পরীক্ষার ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো তথ্য সত্য কিনা তা খুঁজে বের করে। রয়টার্সের মতো মিডিয়ার ফ্যাক্ট চেকও তথ্য যাচাইয়ের জন্য সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও বক্তব্য: দালিলিক প্রমাণের বাইরেও আমরা প্রায়ই কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের জ্ঞানের উপর নির্ভর করি। আমরা অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে প্রাপ্ত কোনো তথ্যকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করি না। শুধুমাত্র যারা স্বপরিচয়ে অন দ্য রেকর্ড কথা বলতে ইচ্ছুক তাদের উদ্ধৃত করি। বিশেষজ্ঞ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার জ্ঞানের গভীরতা, নিরপেক্ষতা এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো আমরা বিবেচনায় রাখি।
ফ্যাক্টচেক কন্টেন্ট লেখা: উপরের পর্যায়গুলো অতিক্রম করে আমাদের প্রাপ্ত প্রমাণাদি এবং সেগুলোর ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে একটি ফ্যাক্ট চেকিং কন্টেন্ট রচনা করি। আমাদের কন্টেন্টগুলিতে উল্লেখ্য সুত্রের লিংক প্রদান করি। কোনো নথিপত্র থাকলে সেগুলো যুক্ত করি। এবং কোন প্রমাণ আমরা কিভাবে সংগ্রহ করেছি সেটিও কন্টেন্টে উল্লেখ করা থাকে। এতে পাঠকের নিজের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনে তথ্যটি যাচাই করে নেয়ার সুযোগ থাকে।
লেবেলিং: আমাদের ফ্যাক্ট চেক কন্টেন্টে যাচাই করা দাবির বিষয়ে চার ধরনের সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকি।
- বেঠিক: অর্থাৎ, এই দাবিটি ভুল বা অসত্য।
- বিকৃত: ছবি বা ভিডিওকে যদি সম্পাদনার মাধ্যমে বদলে ফেলা হয় তাহলে আমরা ‘বিকৃত’ বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছাই।
- বিভ্রান্তিকর: কোনো দাবি পুরোপুরি অসত্য নয় আবার পুরোপুরি সত্যও নয়। বা দাবিটির সাথে আরও কোনো তথ্য যুক্ত
- না করলে মানুষের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথবা সঠিক তথ্যই ভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহারের কারণে মানুষ বিভ্রান্ত
- হতে পারে- এমন ক্ষেত্রে আমরা ‘বিভ্রান্তিকর’ অভিধাটি ব্যবহার করি।
- অপ্রমাণিত: প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অথবা প্রমাণের অভাবে কোনো দাবির ঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করা সম্ভব না
- হলে সেটিকে আমরা ‘অপ্রমাণিত’ হিসেবে পাঠকের সামনে তুলে ধরি।