দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ জয়ের পর ইতিমধ্যে শপথ নিয়ে নিয়েছেন বিজয়ী সংসদ সদস্যরা।
এখন দলটির মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলে মন্ত্রিসভার স্থান পেতে যাচ্ছেন কারা। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। যে সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তাদের সংখ্যার অনূন্য নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হতে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হতে পারিবেন। এবং সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া এবং সংসদ-সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে এই অনুচ্ছেদের (২) বা (৩) দফার অধীন নিয়োগ দানের প্রয়োজন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাবার আগে যাঁহারা সংসদ-সদস্য ছিলেন, এই দফার উদ্দেশ্য সাধনে তারা সদস্যরূপে বহাল থাকবেন।
আওয়ামী লীগ সরকার গত ৩ মেয়াদে ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। এর আগে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করার ১৮ দিন পর মন্ত্রিসভায় আরও ছয় জন যোগ হন। এরও প্রায় আড়াই বছর পর আরও দুজনকে মন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সেই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিসভার আকার আরও বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জন ছিলেন।
এবারও ধারণা করা হচ্ছে মন্ত্রিসভার আকার ৩৫ থেকে ৪০ জনের মধ্যেই থাকবে। তবে একাধিক পদে রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগের সিনিয়র মন্ত্রীদেরই প্রাধান্য দেয়া হতে পারে মন্ত্রিসভায়। এছাড়া নতুন করে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তালিকা তৈরি করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় অনেক নতুন মুখ আসছেন। তালিকায় অনেক নতুন-পুরোনো মুখ রয়েছে। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী থাকছেন ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে আ ক ম মোজাম্মেল হক আর কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম থাকার কথা রয়েছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীরাও থাকবেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মুতর্জাও আছেন মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায়।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম যুক্ত হতে পারেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। জামালপুর-৫ (সদর) আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদও।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়া নতুন সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ পাঠ করান।