ফিচার ডেস্ক
‘ফাস্টিং’ বা উপবাস আধুনিক বিশ্বে একটি ব্যাপক প্রচলিত শব্দ। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সব ধরনের শক্ত এবং তরল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ফাস্টিং বা উপবাস। আবার শুধু তরল খাবার খেয়েও ফাস্টিং করা যায়। দেহের সুরক্ষায় ফাস্টিং থেরাপির উদ্দেশ্য হল শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে দেওয়া এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা। প্রতিটি মানুষ আলাদা। তাই ব্যক্তিভেদে ফাস্টিং করার নিয়ম, বিধিও ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা, রোগের ধরণ, রোগে ভোগার সময়কাল বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফাস্টিংয়ের ধরণ এবং সময়কাল নির্ধারিত হয়। তবে থেরাপিউটিক ফাস্টিং সাধারণত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।
উপবাসের আদি ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, আমাদের শরীর বায়ু, পিত্ত, কফ-এই ত্রি ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি। ফাস্টিং করার শুরুতে ব্যক্তির শরীরে ধাতুর ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে ফাস্টিংয়ের ধরণ এবং সময়কাল নির্ধারণ করতে হয়। যেমন ধরুন, যার শরীর কফ প্রকৃতি সম্পন্ন বা কফের আধিক্য রয়েছে সেই ব্যক্তি ষোল ঘন্টা বা তার বেশি সময় ফাস্টিং করতে পারেন। কারন এদের হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি সম্পন্ন হয় মানে খাবার ধীরে হজম হয়। আবার যার শরীর বায়ু ধাতু সম্পন্ন তাদের জন্য চৌদ্দ ঘন্টা বা তার কম সময় ফাস্টিং করা ভালো। কারণ তাদের শরীরে বায়ুর প্রভাব বেশি হওয়ায় অধিক সময় পেট খালি থাকলে গ্যাস তৈরি হয়ে কষ্টকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যাদের শরীর পিত্ত প্রকৃতির তাদের জন্য ষোল ঘন্টার ফাস্টিং যর্থাথ। কারণ এদের খাবার হজম হয় দ্রুত। সুতরাং অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ফাস্টিং শুরু করতে হবে।
ফাস্টিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা বিরতি দিয়ে খাওয়া। বর্তমান সময়ে ফাস্টিং নিয়ে যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে তা মূলত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয় নিয়ে। এই নিয়মে ফাস্টিংয়ে দিনের ষোল ঘন্টা শরীরকে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রেখে আট ঘন্টার সাইকেলে খাবার গ্রহণ করা হয়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে যে আলোচনা এবং প্রয়োগ দেখা যায় তার সঠিক প্রয়োগ জরুরি। কেননা, সঠিক নিয়ম অনুযায়ী অনুশীলন না করলে উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের নমুনা
ঘুম থেকে উঠে সকাল ৭:০০ টায় হালকা গরম লেবু পানি বা ভিনেগার পানি পান করা
নাস্তার সময় সকাল ৮:০০ টায় হারবাল চা বা ব্ল্যাক কফি
দুপুরের খাবার ১২:০০ টায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সাথে সবজি বা সালাদ (৭৫০ ক্যালোরি)
স্ন্যাকস্ ৩:০০ টায় এক মুঠো বাদাম বা ড্রাই ফুটস্, ইয়োগার্ট (৫০০ ক্যালোরি)
রাতের খাবার ৭:০০ টায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সাথে সবজি বা সালাদ (৭৫০ ক্যালোরি)
ঘুমানোর সময় ১০:০০ টায় হারবাল পানীয় বা নরমাল পানি
ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা, রোগের ধরণ এবং সময়কাল বিবেচনা করে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সাতদিন, দশদিন, চৌদ্দদিন বা একুশ দিনের করা যেতে পারে।
ড্রাই ফাস্টিং
ড্রাই ফাস্টিং হল সূর্য উদয়ের পূর্ব থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া সময়কাল পর্যন্ত সব ধরনের শক্ত এবং তরল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। এই নিয়মে ফাস্টিংয়ে মধ্যরাতে খাবার খেয়ে ফাস্টিং শুরু করতে হয় এবং পরের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় খাবার খেয়ে ফাস্টিং ভাঙতে হয়। এই ফাস্টিং সপ্তাহে একদিন, দুইদিন, সাতদিন, পনেরদিন বা একমাস এমনকি চল্লিশ দিন পর্যন্ত করা যেতে পারে।
ইসলাম ধর্মের ত্রিশ দিন রোজা পালন ড্রাই ফাস্টিংয়ের নিয়মের মধ্যে পড়ে। স্বাস্থ্য সুফল পেতে থেরাপিউটিক নিয়মে এই ফাস্টিং করতে হলে খাবার গ্রহণে নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। রোজার সময় সেহরিতে ভাত, মাছ, মাংসসহ নানা ভারী খাবার খেয়ে রোজা রেখে দিন শেষে ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার, বাইরের কেনা প্যাকেটজাত খাবারে ইফতার করলে উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশি।
ড্রাই ফাস্টিং করার সময় সর্তকতার সাথে খাবার নির্বাচন করতে হবে। শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস্ এবং আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। এ সময় শরীর পানিশূন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকায় সচেতনতার সাথে নিয়ম অনুযায়ী তরল বা পানীয় খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই