পেটের চর্বি কমানোর সেরা ছয় উপায়

পেটের চর্বি কমানোর সেরা ছয় উপায়

মার্চের ৪ তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব স্থুলতা দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হয়েছে দিনটি। প্রতিপাদ্য ছিল- তারুণকে বাঁচাতে স্থুলতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নব্বইয়ের দশকের পর বিশ্বব্যাপী স্থুলতার হার বহুগুণে বেড়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার এক হিসেবে দেখা যায় গত ৪০ বছরে বিশ্বব্যাপী স্থুলতা বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। জীবনযাপনের পরিবর্তনই মূলত এর জন্যে দায়ী।

ওজন বেশি থাকা মানেই অসুস্থতা নয়। অতিরিক্ত ওজন থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষই বেশ সুস্থ থাকে। আবার অনেকের ওজন কম থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় তেমন সুস্থ থাকেনা বা তাদের মেটাবলিজম বা খাদ্য পরিপাকক্রিয়া থাকে খুবই দুর্বল। তাই বলা যায়, সমস্ত শরীরে ত্বকের নিচে থাকা চর্বি আসলে তেমন বড় কোন সমস্যা না। কিন্তু আপনি চিকন হন বা মোটা, আপনার পেটের বা কোমরের চারপাশে যদি চর্বি থাকে তাহলে সেটা অনেক বেশি ক্ষতিকর। ঘরে বসে নিজে নিজেই একটা মেজারিং টেপের সাহায্যে সহজেই বের করে ফেলতে পারেন আপনি অ্যাবডোমেনাল অবিসিটিতে ভুগছেন কিনা। পেটের বা কোমরের আকার পুরুষদের ক্ষেত্রে যদি হয় ৪০ ইঞ্চি (১০২ সেমি) আর নারীদের ক্ষেত্রে যদি হয় ৩৫ ইঞ্চি (৮৮ সেমি), আপনাকে পেটের চর্বি ঝরাতে জোরেশোরে নেমে পড়তে হবে। পেটের চর্বি কমানোর সেরা ছয়টি উপায় জানুন এখানে।

চিনি বাদ, চিনিযুক্ত খাবারও বাদ

নানাধরণের খাবারে চিনি বা শর্করা থাকেই। এরপরেও আলাদাভাবে চিনি খাওয়া হলে সেটা খাদ্য পরিপাক ক্রিয়ার জন্য খুবই ক্ষতিকর। চিনিতে থাকে অর্ধেকটা গ্লুকোজ আর অর্ধেকটা ফ্রুক্টোজ। আমাদের লিভার কিছু নির্দিষ্ট মাত্রার ফ্রুক্টোজ হজম করতে পারে। তাই আপনি যখন প্রচুর পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত চিনি খাবেন তখন লিভার নির্দিষ্ট মাত্রার উপরের ফ্রুক্টোজকে চর্বিতে রুপান্তরিত করে। আর এই চর্বি গিয়ে জমা হয় লিভারে ও পেটে। এভাবেই চিনি সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। লিভারে ও পেটে চর্বি জমা হলে আমাদের বিপাক ক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি এটা ইনসুলিন রেজিসট্যান্স তৈরি করে। আমাদের শরীরে যখন ইন্সুলিন রেজিসট্যান্স তৈরি হয় তখন আমাদের শরীরের কোষগুলো ইনসুলিন নামক হরমোনের প্রতি স্বাভাবিকভাবে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয় ফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।

মেদহীন কোমর পেতে চাইলে

এক্ষেত্রে লিকুইড সুগার বা বিভিন্ন পানীয়তে থাকা চিনি আরও বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ আমাদের ব্রেন সলিড চিনির ক্যালরি সাথে সাথে মাপতে পারলেও লিকুইডে থাকা চিনি সহজে ধরতে পারে না। এতে করে আপনার ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ যে নিজের অজান্তেই কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। বাচ্চা এবং বড়দের ক্ষেত্রে ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজনের কারণ এই মাত্রাতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করা। তাই বাজারজাত ফলের রস না খেয়ে আস্ত ফলটাই খেতে চেষ্টা করুন। তাতে করে ফলে থাকা ভিটামিনের পাশাপাশি আঁশ বা ফাইবারও আপনার জন্য স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসবে। একই ভাবে প্রতিদিনের চা কফিটাও চেষ্টা করুন চিনি ছাড়াই খেতে।

প্রোটিন গ্রহনের মাত্রা বাড়ান

ওজন কমানোর ব্যাপার আসলে প্রোটিন হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বা পরিপোষক। প্রোটিন খেলে ক্রেভিংস বা ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা কমায় ৬০%, মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় দিনে ৮০ থেকে ১০০ ক্যালরি পর্যন্ত আর সারাদিনে ৪৪১ ক্যালরি পর্যন্ত কম খাবার গ্রহণ করে। তাই ওজন কমানো যদি আপনার লক্ষ্য হয় তবে প্রোটিন গ্রহনের মাত্রা বাড়ান। এটা শুধু যে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে তাই নয়, পরে কখনো ডায়েট কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ছেড়ে দিলেও সহজে ওজন ফিরে আসবে না। কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রোটিন গ্রহণ পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। যেখানে রিফাইন্ড তেল ও কার্বোহ্রাইড্রেট পেটের চর্বি বাড়ায়, সেখানে উচ্চমানের প্রোটিন, ফল আর সবজি পেটে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় উচ্চমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, সি ফুড, বাদাম ও বীজ, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ও আস্ত শস্যদানা ইত্যাদি রাখুন।

খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিন

অনেক পরীক্ষাতেই দেখায় খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে তা পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি পরীক্ষাতে এটাও দেখাচ্ছে যে পেটের ও লিভারের চর্বি কমাতে লো-কার্ব ডায়েট, লো-ফ্যাট ডায়েটের চাইতেও বেশি কার্যকরী। তবে কার্ব-মুক্ত বা লো-ফ্যাট ডায়েট অনুসরণ করতে হলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
৪ ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাবার বিশেষত আঠালো ধরণের আঁশ আছে এমন খাবার খান। বেশি করে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হলেও সব আঁশজাতীয় খাবারের কার্যকরণ একই না। আঠালো ধরণের আঁশজাতীয় খাবার ওজনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এই আঁশগুলো পানির সাথে মিলে ঘন জেলে পরিণত হয়ে হজমপ্রক্রিয়া ও অন্যান্য উপকারি পরিপোষকের শোষণ ধীর করে। এতে করে অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভব হয় ও দীর্ঘক্ষন ক্ষিদেভাব কমায়। তাই পেটের চর্বি কমাতে চাইলে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খান।

ব্যায়ামের বিকল্প নাই

নানাকারণেই আমাদের শরীরের জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ন। রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান দীর্ঘ জীবনের জন্য ব্যায়ামের বিকল্পও নাই আসলে। পেটের জেদি চর্বি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবযাপনে ব্যায়ামও একটা গুরুত্বপূর্ন অনুসঙ্গ। শুধুমাত্র পেটের ব্যায়ামেই যে কারও পেট একদম চর্বিমুক্ত হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। তবে হাটা, দৌড়ানো বা সাঁতারের মত ব্যায়ামও এক্ষেত্রে কার্যকরী। এমনকি নিয়মিত ব্যায়ামে পেটের চর্বি সহসা ফিরে আসতেও বাঁধা দেয়। সুন্দর মেদহীন কোমরের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে, যেগুলো খুবই কার্যকর।

কোন খাবার কতখানি খাচ্ছেন তার হিসেব রাখুন

কি খাচ্ছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন। তবে তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ন কতটুকু খাচ্ছেন তার হিসেব রাখা। বেশিরভাগ মানুষই ভাবে সে ‘হাই প্রোটিন’ বা ‘লো কার্ব’ সমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছে কিন্তু সেব্যাপারে তেমন স্পষ্ট ধারনা না রেখেই। তাই চেষ্টা করুন, একজন পুষ্টিবিদের সাথে যোগাযোগ করে কি খাবেন না খাবেন আর কতটুকু খাবেন সেব্যপারে একটা ধারণা নিয়ে নিতে।

পেটে চর্বি থাকা মানেই আপনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানারকম জীবনঘাতি রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তাই যদি আপনার পেটে চর্বি থাকে, আজই পেটের চর্বি কমানোর উদ্যোগ নিন আর গড়ে তুলুন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অভ্যাস।

The post পেটের চর্বি কমানোর সেরা ছয় উপায় appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.

Scroll to Top