পুরনো সাথীদের মিলনোৎসবে ডাকছে ছায়ানট

পুরনো সাথীদের মিলনোৎসবে ডাকছে ছায়ানট

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট

ছায়ানট। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি সংস্কৃতিচর্চায় দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। একইসাথে যেটি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, বিজ্ঞানী, সমাজব্রতীসহ নানা ক্ষেত্রের মানুষের সৃজনচর্চার মিলনমঞ্চ। সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির পথপরিক্রমণের গৌরবের অংশ ছায়ানট। বলা যায়, স্বাধীনতার পর সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চাকে আরও ব্যাপক ও নিবিড় করে তোলার সৃষ্টিশীল সাধনায় নিমগ্ন রয়েছে ছায়ানট। প্রায় ছয় দশক ধরে সাংস্কৃতিক সাক্ষরতা ও সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

একইসাথে ছয় দশক পেরিয়ে আজ, দেড়শতাধিক শিক্ষক এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে স্থির প্রত্যয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন। বাংলার সঙ্গীতসংস্কৃতির চর্চা ও শিক্ষার্থীদের বাঙালি জাতিসত্তায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ছায়ানট ১৯৬৩ সালে ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠা করে। জন্মাবধি ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, লোকসঙ্গীতসহ মূলধারার বাংলা গানের রসাস্বাদন এবং শাস্ত্রীয় নৃত্যকলা ও শুদ্ধসঙ্গীতের নানান ধারার পাঠদানে নিমগ্ন। সঙ্গীতের সুর-ছন্দ-বাণীর পাশাপাশি নিরলস প্রয়াস চলছে সকলের মধ্যে সংস্কৃতিমানস গড়ে তুলবার, সম্প্রীতির সমাজ অটুট রাখতে সকলকে অনুপ্রাণিত করবার।

দেশ এবং বিশ্বে চলমান সামাজিক বিদ্বেষের মুখে এবারে ছায়ানটের আহ্বান–বিশ্বমানব হবি যদি… সম্পূর্ণ বাঙালি হ’। এই অঙ্গীকার উচ্চারণে, আগামি ২ মার্চ (শনিবার) সঙ্গীতবিদ্যায়তনের পুরনো সহযাত্রীদের একত্র করে আয়োজিত হচ্ছে মিলনোৎসব- ‘প্রাক্তনী সম্মিলন’। ছায়ানট সকলকে ডাক দিচ্ছে, আবহমান বাঙালি ঐতিহ্যের সম্প্রীতির প্রত্যাবর্তন এবং মানবতাবোধের পুনর্জাগরণে শামিল হতে। কারন, ছায়ানট বিশ্বাস করে, সমাজ ও সংস্কৃতির বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রাক্তনী সম্মিলন তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

‘প্রাক্তনী সম্মিলন’ আয়োজন নিয়ে ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে আয়োজন করা হয় এক সংবাদ সম্মেলনের। এই সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে জানানো হয় _

“অতীত ও বর্তমানের সকল সঙ্গীকে নিয়ে এবারের লক্ষ্য, অতীত দিনের স্মৃতিতর্পণ এবং বর্তমানের প্রাসঙ্গিকতায় ফেলে আসা এবং বর্তমান ও আগামীর পথের পর্যালোচনা ও ভাবনা। সম্মিলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমে অন্তত দুবছর পাঠ নেওয়া দেশ ও প্রবাসের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক এবং সংগঠকদের। নিবন্ধন হচ্ছে সংস্কৃতি-ভবনে এবং অনলাইনে ছায়ানটের ফেসবুক পেইজে। নিবন্ধন চলবে এই জানুয়ারির শেষদিন পর্যন্ত।

সারাদিনব্যাপী আয়োজনে থাকছে উদ্বোধন পর্ব, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সর্বোপরি, কেমন মানুষ ও দেশ গড়তে চাই, দেখতে চাই তা নিয়ে কথোপকথন। পরিকল্পনা আছে, সঙ্গীতবিদ্যায়তনের আদি-মধ্য-চলতি পর্বের পথচলা নিয়ে বিদ্যার্থীদের বয়ানে স্মৃতিচারণমূলক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করার। তবে সকলের জন্য খুব সম্ভব সব থেকে আনন্দের হবে সঙ্গীদের সঙ্গে হৈ হৈ করে খোলা কণ্ঠে গান গেয়ে, মুক্ত মুদ্রায় নেচে, বাদ্য বাজিয়ে জমায়েতকে ছন্দোবদ্ধ করায় এবং নির্মল আড্ডা দেওয়ায়।

আমরা, দেশ-দশ নিয়ে সচেতন হবার, সকলে মিলে ভাববার এবং আনন্দঘন এমন এক মিলনমেলার প্রতীক্ষায় আছি।”

সারাবাংলা/এএসজি

Scroll to Top