ভারতে নারী চিকিৎসক ও নারী কর্মীদের নিরাপত্তায় নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। মোবাইল অ্যাপ থেকে সরাসরি থানায় যোগাযোগ করতে পারবেন নারীরা। রাতে কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে চালু করা এই অ্যাপের নাম ‘রাত্তিরের সাথী’।
সংবাদমাধ্যম ‘খবর ৩৬৫ দিন” এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন হস্টেলসহ বিভিন্ন জায়গায় নারী কর্মজীবীদের জন্য আলাদা শৌচালয় ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তার জন্য রাতে কর্মস্থলে রাখা হবে ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে বিশেষ নারী স্বেচ্ছাসেবক। শুধু তাই নয়, প্রতিটি নারী কর্মীর ফোনে ওই মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নারীদের নাইট ডিউটি বিশেষ হেল্পলাইন ব্যবস্থায় থাকছে, স্বেচ্ছাসেবীরা যারা ৩৬৫ দিন চিকিৎসকদের সেবা দিবেন।
শনিবার (১৭ আগস্ট) ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। নবান্নে এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অ্যাপটি উদ্বোধন করেন। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে
- ১) রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন হস্টেলসহ বিভিন্ন জায়গায় মহিলা কর্মজীবীদের জন্য আলাদা শৌচালয় ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
- ২) নারী কর্মজীবীদের নিরাপত্তার জন্য রাতে কর্মস্থলে রাখা হবে ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে এক বিশেষ নারী স্বেচ্ছাসেবক।
- ৩) প্রতিটি কর্মস্থল সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। ২৪ ঘন্টা ধরে চলবে বিশেষ নজরদারি। সিসিটিভি দিয়ে সুরক্ষিত ‘সেফ জোন’ তৈরি করা হবে।
- ৪) নারী কর্মজীবীদের জন্য চালু করা হচ্ছে বিশেষ সঙ্কেতযুক্ত বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (মোবাইল অ্যাপ) ‘রাত্তিরের সাথী’। প্রতিটি নারী কর্মজীবীর ফোনে ওই মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে স্থানীয় থানার যোগাযোগ থাকবে। অর্থাৎ কোনো নারী কর্মজীবী বিপদে পড়লে ওই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই সরাসরি থানায় বার্তা পাঠাতে পারবেন।
- ৫) সম্ভব হলে নারীদের নাইট ডিউটি যত কম দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
- ৬) নারী কর্মজীবীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু হচ্ছে। আপাতত ১০০ ও ১০২ নম্বরে সাহায্য চেয়ে ফোন করতে পারবেন।
- ৭) হাসপাতাল-মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন অফিসে নারীদের নৈশকালীন ডিউটি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেন নারী কর্মজীবীর সঙ্গে তার পরিচিত কিংবা কোনো নারী সঙ্গিনীকে ডিউটি দেয়া হয় তার উপরে বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নাইট শিফটে নারীদের একা নয়, টিম হিসেবে ডিউটি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
- ৮) জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে ঢোকা প্রত্যেকেরই শ্বাস পরীক্ষা (ব্রেথ এনালাইজার) করা হবে। অর্থাৎ কেউ মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন কিনা, তা দেখা হবে।
- ৯) নারী কর্মজীবীদের যৌন নির্যাতন রুখতে প্রতিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন অফিসে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে বিশাখা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
- ১০) বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্প কার্যকর করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
- ১১) প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহিলা হস্টেলে রাত ভর চলবে বিশেষ পুলিশ পেট্রলিং।
- ১২) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন থেকে চিকি ৎসক-সহ প্রতিটি কর্মীকে গলায় ঝোলাতে হবে সচিত্র পরিচয়পত্র।
- ১৩) নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা আধিকারিক নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাঁরাই পুরো নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। নারী-পুরুষ সমান অনুপাতে নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে সমস্ত হাসপাতালে।
- ১৪) কোনো নারী চিকি ৎসক কিংবা কর্মীকে একটানা ১২ ঘন্টার বেশি ডিউটি দেয়া যাবে না, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
- ১৫) বেসরকারি হাসপাতাল গুলিকেও এই নির্দেশিকা গুলো মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।