ন্যাটোর দেশে আক্রমণ নয়, তবে এফ-১৬ দিলে ধ্বংস করা হবে: পুতিন

ন্যাটোর দেশে আক্রমণ নয়, তবে এফ-১৬ দিলে ধ্বংস করা হবে: পুতিন

হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জনবহুল শহর রাফাহয় মুখোশধারী সশস্ত্র ব্যক্তিরা টহল দিতে শুরু করেছেন। তারা শহরের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন বলে জানা গেছে। তাদের হাতে অস্ত্র ও লাঠি দেখা গেছে।

এঘটনার পর থেকে ওই এলাকার হামাসের সদস্যরা পালিয়ে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম আইনিউজ এ খবর জানিয়ে বলেছে, মূলত এলাকার একটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।

তারা নিজেদের ‘দ্য পপুলার কমিটি ফর প্রটেকশন’-এর সদস্য বলে দাবি করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, রাফাহয় যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ ঘটছে। সেসব প্রতিরোধে রাস্তায় নেমেছেন তারা।

জানা গেছে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত থাকায় এলাকায় রসদের ঘাটতি পড়েছে। এতে করে শহরের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উপজাতীয় গোষ্ঠীর নেতৃত্বে এই সশস্ত্র ব্যক্তিরা রাফাহর দখল নিয়ে রাস্তাঘাট ও বাজারে টহল দিতে শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে গাজায় বসবাসীকারী ফিলিস্তিনিরা আইনিউজকে জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে মুখোশধারী ব্যক্তিরা অস্ত্র ও লাঠি হাতে করে গাজার দক্ষিণ শহর রাফাহর রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। তারা এলাকার নিরাপত্তার রক্ষায় কাজ করছেন।

‘দ্য পপুলার কমিটি ফর প্রটেকশন’-এর একজন মুখপাত্র ফ্রান্স নিউজ এজেন্সি এএফপি’কে জানিয়েছেন, মার্চ মাসের শুরু থেকে এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বাজার ও পরিবহন খাত নিরাপদ রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

কারা এ নির্দেশ দিয়েছেন জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি তিনি। এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি’!

এ বিষয়ে দক্ষিণ গাজায় বসবাসীকারী ফিলিস্তিনি এক ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের নাম না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় হামাস দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই ফাঁকে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, চুরি এমনকী খুনের মতো ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, হামাস এখন গাজায় এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে। এতে করে এলাকায় নিরাপত্তার ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে’।

তিনি বলেন, তারা (হামাস) যদি গাজা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো, তাহলে এত চুরি, তারপরে একজন আরেকজনকে খুন করছে, এগুলো দেখতে পেতাম না। এছাড়া যখন এলাকায় ত্রাণ এসে পৌঁছাচ্ছে, তখন তা নিয়ে সবাই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

আইনিউজ জানাচ্ছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীর এসব সদস্যরা অরাজকতা ঠেকাতে রীতিমতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ, স্থানীয়দের কেউ কেউ অপরাধী চক্র গড়ে তুলেছে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও ত্রাণ সহায়তা সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এই অরাজক পরিস্থিতির মধ্যেও গাজায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বলে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংস্থার উপপরিচালক স্কট অ্যান্ডরসন ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’-কে বলেছেন, ‘ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে আমাদের ত্রাণ পৌঁছানোর আগেই অপরাধী চক্র নিয়ে নিতে চাইছে। এটা ঠিক যেন হলিউডের সিনেমার মতো স্টাইলে ঘটছে’।

এদিকে, আইনিউজ জানাচ্ছে, হামাস এবং ইউএনআরডব্লিউএ-কে এড়িয়ে ইসরায়েল গাজার স্থানীয় পরিবারদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করতে শুরু করেছে।

অপরদিকে, যুদ্ধোত্তর গাজায় পশ্চিম তীরে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো যাতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারে, সে বিষয়ে তাদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসরায়েল।

রাফাহ শহরের নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়ে, ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব প্যালেস্টিনিয়ান ট্রাইবস’ গত সপ্তাহে একট বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাফাহয় সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ‘প্রটেকশন কমিটিগুলো’ কাজ শুরু করেছে।

বিবৃতিতে তারা জানায়, নিরাপত্তা রক্ষায় হামাসের যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতেন, ইসরায়েল তাদের হত্যা করেছে। তাদের স্থলাষিভিক্ত হিসেবে ‘প্রটেকশন কমিটিগুলি’ নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে।

উপজাতীয় নেতারা বলেছেন, ইসরায়েলের প্রস্তাবনা অনুযায়ী হামাসকে সরিয়ে দিয়ে তারা এলাকা দখলে রাখতে চাইছেন না।

এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় উপজাতি গোষ্ঠীর প্রধান আকেফ আল-মাস্রি বলেছেন, গাজা উপত্যকার প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না।
তিনি বলেন, উপজাতীয় নেতারা শুধুমাত্র জরুরি ত্রাণ বিতরণ কাজের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

‘ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান রামি আবদু বলেছেন, উপজাতীয় নেতারা হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তাদের মধ্যকার চরমপন্থি নেতাদের কারণে হামাসকে সরিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

গাজার জনবহুল এলাকা রাফাহয় মুখোশধারী ব্যক্তিরা পাহার দিচ্ছেন


তিনি বলেন, ধরুন, আমি যদি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই, তাহলে প্রথমেই আমাকে গুলি করে হত্যা করা হবে।

কয়েক দশক ধরে প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েলের একটি অংশ থেকে শরণার্থীদের গাজায় আসার কারণে এলাকার প্রভাবশালী পরিবারগুলির আধিপত্য খর্ব হয়েছে বলে জানান রামি আবদু।

যুদ্ধ শুরুর পর গাজা থেকে মিশরে আশ্রয় নেওয়া লেখক ও অনুবাদক জেসন শাওয়া জানান, উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলো যদি গাজা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে, তাহলেও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, গাজাবাসী কোনোমতেই এটা হতে দেবে না। ২০ বছর আগে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে যে অরাজকতা বিরাজ করতো, সেই অবস্থায় দাঁড়াবে গাজা।

তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের এই সময়ে কোনো কোনো গোষ্ঠী শরণার্থীদের ত্রাণ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের প্রভাষক ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ডা. অ্যাড্রিয়াস ক্রিগ বলেন, গাজা উপত্যকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গোষ্ঠীরগুলোর বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহবোধ করবে না ইসরায়েল।

তিনি বলেন, এর আগে এই উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলো অতীতে হামাসের সঙ্গে পাল্লা দিতে চোরাচালান এবং অপধারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস হামলার পরিকল্পনা করলেও এই গোষ্ঠীগুলো তখন বেশিরকমভাবে বাড়াবাড়ি করেছিল।

এ বিষয়ে ইনো বেন মেনাচেম নামে এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, গাজায় নিরাপত্তার রক্ষায় গোষ্ঠীগুলোর পেছনে ‘সাদা পোশাকে থাকা’ হামাস কর্মীরা যুক্ত রয়েছেন।

তবে তিনি এটাও বলেন, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল জয়লাভ করলে এ সব উপজাতীয় গোষ্ঠীর কোনো কোনোটি তাদের অবস্থান পাল্টে ফেলতে পারে।

Scroll to Top