এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
চাঁদপুরে জাহাজে সাতজন নৌ পরিবহন শ্রমিক হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট। সারাদেশের নৌ শ্রমিকরা এ ধর্মঘট পালন করছেন, এতে সারাদেশে আমদানি পণ্য খালাস ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ধর্মঘটের কারণে দেশের পণ্য পরিবহন থেমে থাকায় এর প্রভাব বাজারে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত বারোটা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এ ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারাদেশের বিভিন্ন বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম।
বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানান, এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজে মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারি ভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এবং সকল নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হওয়ার কারণে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। গত রাত বারোটা থেকে সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌ যান চলাচল এবং পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলেও জানান নৌ পরিবহন শ্রমিকরা।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে উঠে এসেছে সারাদেশের ধর্মঘটের চিত্র

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা ২০টি মাদার ভেসেলে (বিদেশ থেকে আসা বড় জাহাজ) আটকা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন আমদানি পণ্য।
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলাতেও বৃহস্পতিবার মধ্যেরাত থেকে চলছে নৌ-যান শ্রমিকদের ধর্মঘট। সব ধরনের পণ্যবাহী, তেল-গ্যাসবাহী ও বালুবাহী নৌযানের শ্রমিকেরা এ ধর্মঘট শুরু করেছেন। তবে আপাতত সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
পায়রা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, একইরকম অবস্থা পায়রা বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রমে, বন্দরের আউটারে এবং ইনারে থাকা সকল মাদার ভ্যাসেল ও লাইটারেজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা।
বরিশাল আভ্যন্তরীণ নৌবন্দরেও রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে মালবাহী, তৈল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা ধর্মঘট চলবে। তবে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের বিষয় বিবেচনা করে আপাতত সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় শ্রমিক নেতারা।
নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে অচল হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নদী বন্দরের কার্যক্রমও। আশুগঞ্জ নদী বন্দরে আটকা পড়েছে মালবাহী কার্গো জাহাজ। ধর্মঘটের কারণে নদী বন্দরে কার্গো জাহাজ থেকে বন্ধ রয়েছে পণ্য ওঠানামা।
আশুগঞ্জ নদী বন্দরে প্রতিদিন সার, রড, সিমেন্ট, ধান, চাল, পাথর, কয়লাসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অর্ধশত জাহাজ নোঙর করে। এসব পণ্য আশুগঞ্জ থেকে নদী পথে ঢাকা, চন্দ্রগ্রাম, মোংলা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশে যায়।
সারাদেশের বিভিন্ন নৌবন্দরকে কেন্দ্র করে ১০ হাজার ছোট–বড় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে এবং ওইসব নৌযানে লক্ষাধিক শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বেলা তিনটার পর এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই ঘটনায় র্যাব-১১ ও ৬-এর যৌথ অভিযানে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে র্যাব-১১-এর সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে ব্রিফিং করে ঘটনার বিস্তারিতে তুলে ধরা হয়। চাঁদপুরে নৌ পুলিশের কাছে আকাশকে হস্তান্তর করে র্যাব। আকাশ মণ্ডল বর্তমানে সাত দিনের রিমান্ডে আছেন।