নেতানিয়াহু শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা – DesheBideshe

নেতানিয়াহু শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা – DesheBideshe

ওয়াশিংটন, ১৫ মার্চ – যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে শান্তির পথে বড় বাধা বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের জনগণকে নতুন নেতা বেছে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে এক সংবাদ সম্মেলনে চাক শুমার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে বড় বাধার নাম বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার নেতৃত্বাধীন সরকারও ইসরায়েলের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

‘তবে গণতন্ত্রে সবসময় জনগণের হাতে নিজেদের নেতা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। আগামী নির্বাচনে ইসরায়েলের জনগণ তাদের দেশের জন্য অন্য কোনো নেতা নেবেন কি নেবেন না— তা একান্তভাবেই তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো— তাদের হাতে সুযোগ রয়েছে।’

‘আমার মতে, ইসরায়েলের জনগণের এখন উচিত একজন নতুন নেতার হাতে দেশের শাসনক্ষমতা প্রদান করা। কারণ. গত ৭ অক্টোবরের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলের পুরো দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে এবং ওই হামলা পরবর্তী ইসরায়েলের ভবিষ্যত কেমন হবে— তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের যে কয়েকজন ইহুদি ধর্মাবলম্বী নেতা দেশটির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাদের মধ্যে চাক শুমার অন্যতম। তিনি একই সঙ্গে মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায় এবং সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমেক্রেটিক পার্টিরও একজন জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী নেতা।

নিজ বক্তব্যে শুমার আরও বলেন, ইসরায়েলের সরকার যদি দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করে— সেটি হবে বড় একটি ভুল এবং সেই ভুলের জন্য মাশুল গুণতে হবে সাধারণ ইহুদিদের।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েলকে সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওয়াশিংটনের কোনো নির্দেশনা ইসরায়েলের সরকার মানছে না।

যেমন ওয়াশিংটনের প্রধান নির্দেশনা ছিল— গাজায় বেসামরিক জনগণের হতাহতের ঘটনা ঠেকানো, হামলা আরও সুনির্দিষ্ট করা এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধান মেনে নেওয়া।

কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপত্তি জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতা ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ দলের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওপর চাপ বড়াছে।

জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি সিনেট নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, ‘তিনি যা বলেছেন, যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করে বলেছেন এবং আমরা তার মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে।’

যুদ্ধের পর ইসরায়েলের নির্বাচন হওয়া উচিত কি না— প্রশ্নের উত্তরে কিরবি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন ইসরায়েলের জনগণ।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৩ হাজার। নিহত ও আহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং বেসামরিক লোকজন।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

এদিকে শুমারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো ‘বানানা রিপাবলিক’ নয় এবং দেশের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহুর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

‘নেতানিয়াহু একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভার সব সদস্যও তা ই। ইসরায়েলের জনগণ হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ বিজয় চায়। আমরা আশা করব, সিনেট নেতা শুমার ইসরায়েলের নির্বাচিত সরকারের প্রতি সম্মান জানাবেন,’ বলেছেন লিকুদ পার্টির ওই মুখপাত্র।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১৫ মার্চ ২০২৪

Scroll to Top