আগামী নির্বাচনের আগে যে কোনো মূল্যে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সরকার পরিস্থিতির উন্নতিতে আপ্রাণ চেষ্টা ও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় গণমাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা।
মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ, এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি শুচিস্মিতা, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহীর উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মিটফোর্ডে খুনের ঘটনায় দ্রুত সময়ে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। নির্দেশনা দিয়েছেন, ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উন্নতি করাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা আমাদের উদ্দেশ্য। ভোট দিয়ে মানুষ যাতে ভাল অনুভব করেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকরা বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের দ্বারা আমরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের দ্বারা বাধার সৃষ্টি হয়েছে, টেলিফোন পেয়েছি। এগুলো যেন না থাকে। গোপন কক্ষে কে কাকে ভোট দিল, এটা ছাড়া সব অনিয়ম বা সংবাদ কাভার লাইভ করতে পারি। কালো টাকার ছড়াছড়ি বিষয় থাকে। অতীতে হয়রানির শিকার হয়েছি, গোয়েন্দাদের কাছে টেলিফোন পেয়েছি। তথ্য ছিল, প্রচার করতে পারিনি। সেদিন ধীরগতি না, আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আবু কালাম আজাদ বলেন, এগুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগের ৩টা নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো প্রকৃত নির্বাচন ছিল না, জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। আগামীর নির্বাচন সুষ্ঠু যেন হয়, সেটা এনশিওর করা হবে। প্রায় ৪৭ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে, সব কেন্দ্রে পুলিশ রাখা সম্ভব হবে না, তবে আনসার থাকবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বলা হবে। আপনারা (সাংবাদিকরা) কোনো হয়রানির শিকার হবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি থাকে, এবারও থাকবে। আপনারা সেটা ফলো করবেন। এরপরও বাধার সৃষ্টি হলে একজন অফিসারকে ডেজিগনেট করে দেওয়া হবে, তিনি কথা বলে বাধাবিপত্তি দূর করতে কাজ করবেন।
উপ প্রেস সচিব বলেন, সরকার সব পদক্ষেপ নেবে। সরকারের কারও প্রতি কোনো রাগ অনুরাগ নেই। সাংবাদিকরা কোনো রাজনৈতিক দলের দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, সেটা দেখা হবে। এবার নিরপেক্ষ থাকবে প্রশাসন। আপনারা প্রশাসনকে জানাবেন, অনিয়ম দেখলে দ্বিধাহীন চিত্তে রিপোর্ট করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যাগুলো দ্রুত কেটে যাবে।
উপ প্রেস সচিব আরও বলেন, শিগগিরই রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসবে। পাইলট, নাজমুল হোসেন শান্ত সহ আরও অনেক ক্রিকেটার এসেছে। আমার বিশ্বাস, সরকার যেভাবে ভাবছে, এক্সিকিউট করতে পারলে, আরও ভাল ক্রিকেটার রাজশাহীতে পাব। শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় আগ্রহী তরুণরা জাতীয় পর্যায়ে স্বাক্ষর রাখতে পারবে। এছাড়া শুধু চীন নয়, জাপান সফরেও প্রধান উপদেষ্টা আম আমদানি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি তেলের ডিপো স্থাপনের দাবি জানান একজন জ্বালানি ব্যবসায়ী নেতা। আবুল কালাম আজাদ বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অবশ্যই আমরা বক্তব্য পৌঁছে দেব। সংশ্লিষ্টরা যাচাই করে দেখবেন।
রাজশাহীতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের দাবি উঠে। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যাপক বিষয়। সংস্কার আসবে। কারিকুলামের পরিবর্তন পরিমার্জন আসবে।
সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেন, একটা সরকার কীভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠলো? স্বৈরাচারের সময় গণমাধ্যমের দায় ছিল, বড় ভূমিকা ছিল। গত ১৫ বছরে ৬১ জন সহকর্মী সাংবাদিককে হারিয়েছি, গত আন্দোলনেই আমরা ৬ জন সাংবাদিক হারিয়েছি। সাগর-রুনি খুন হয়ে চলে গেছেন। বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছি। কিন্তু গত এক বছরে আমরা গণমাধ্যমের কোনো সংস্কারই দেখতে পাচ্ছি না। খুন-গুমের সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। গণমাধ্যমের যারা মালিক ছিলেন, এখনো তারাই আছেন, তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বিগত সরকার ৭-৮টি টিভি বন্ধ করেছিল, আজও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মিডিয়ার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। মফস্বলের সাংবাদিকরা অলরাউন্ডার। তাদের নির্দিষ্ট বিট থাকে না, সব বিটেই কাজ করতে হয়। কিন্তু সে মোতাবেক মূল্যায়ন হয় না।