সিরাজ শেহাদা (৮), ইসমাইল (৯) এবং সাদ (১১) তিন ভাই। ময়দার পরিবর্তে পশুখাদ্য থেকে তৈরি তেতো রুটি খেয়ে বেঁচে থাকার পর তারা তিনজন গাজা সিটির তাদের বাড়ি থেকে আরও দক্ষিণে পালিয়েছে আসে। তারা বলেছে, মধ্য গাজার দেইর আল বালাহতে তাদের খালার সাথে তার তাঁবুতে আশ্রয় নিতে গোপনে পালিয়ে এসেছিল। কারণ গাজা শহরে খাওয়ার মত কিছুই ছিল না।
গালফ নিউজ জানিয়েছে, সিরাজ শেহাদার ভাষ্য, আমরা যখন গাজা শহরে ছিলাম, কিছুই খেতাম না। আমরা প্রতি দুই দিন পর পর খাবার পেতাম। আমরা পাখি এবং গাধার খাওয়ার জন্য শস্য এবং বীজ থেকে তৈরি রুটি খেয়ে বেঁচে ছিলাম।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় খাদ্য ঘাটতি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গাজার উত্তর দিকে। সেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। মধ্য গাজার পরিস্থিতি অবশ্য উত্তরের থেকে কিছুটা ভালো।
দেইর আল বালাহ তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া এই তিন ভাই জানায়, তারা যুদ্ধে তাদের মা, ভাই এবং বেশ কয়েকজন খালাকে হারিয়েছে। বড় ভাই সাদ জানায়, পশুখাদ্য থেকে তৈরি রুটি ছাড়া তাদের কাছে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। এটা তিতা ছিল। আমরা এটা খেতে চাইনি। আমরা প্রতি দুই দিনে একটি ছোট রুটি খেতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা নোনতা পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

তাদের খালা গর্ভবতী ইমান শাহাদা জানান, তিনি যুদ্ধে তার স্বামীকে হারিয়েছেন। আমি প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছি না। আমি ক্লান্ত এবং মাথা ঘুরছে। এক কেজি আলু কেনারও সামর্থ্যও নেই আমার। আমি জানি না কীভাবে এই তিন বাচ্চার খাবার আমি জোগাড় করবো। আমি গর্ভবতী এবং যেকোন মুহূর্তে সন্তানের জন্ম হতে পারে।
ওয়ার্দা মাত্তার নামের একজন বাস্তুচ্যুত মা তার দুই মাসের বাচ্চাকে নিয়ে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। দুধের অভাবে তাকে কাপড় দিয়ে মোড়ানো একটি খেজুর চুষে খাওয়ানো হচ্ছে। মাত্তার বলেন, আমার নবজাতক ছেলের দুধ খাওয়ার কথা, সেটা প্রাকৃতিক দুধ বা ফর্মুলা দুধই হোক না কেন। কিন্তু আমি তাকে দুধ দিতে পারিনি, কারণ গাজায় দুধ নেই। তাই আমি আমার ছেলেকে শান্ত রাখতে খেজুরের আশ্রয় নিয়েছি।

পরিবারের জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করেন ১১ বছর বয়সী কারেম সামরা। তিনি বলেন, কখনও কখনও আমি যখন পানি নিয়ে ফিরে যাই, তখন অনেকসময় সেগুলো ভারী হওয়ার কারণে আমি পড়ে যাই। আমি কান্না করি, কারণ আমি জানি সাহায্য করার মতো কেউ নেই এবং আমি পানি না নিয়ে গেলে আমার পরিবারের কাছে পান করার মতো কিছু থাকবে না।

খান ইউনিসের রিহাব রেদওয়ান বলেন, আমরা আশা করি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে। আমরা যুদ্ধে ফিরে যেতে চাই না কারণ প্রথম যুদ্ধবিরতির পর যুদ্ধ আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছিল। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, কোন খাবার নেই, পান করার কিছু নেই।
হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইসরায়েল জনাকীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বিমান এবং স্থল হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।




