বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, কোভিড-১৯ এখনও শেষ হয়নি। বরং ভাইরাসটি আবারও রূপ পরিবর্তন করেছে এবং নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে—এনবি১৮১। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি চীনে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে জানা গেছে।
আজ (২৯ মে) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে টাইম ম্যাগাজিন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রেও বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা করে কয়েকটি এনবি১৮১ সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে মনিটরিংয়ের আওতায় থাকা ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এনবি১৮১ কোথা থেকে এসেছে?
গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেজ জিআইএসএআইডি-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ভ্যারিয়েন্টটি প্রথম শনাক্ত হয় এপ্রিলের শেষের দিকে। চীন, ফ্রান্স, জাপান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং থাইল্যান্ড থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে এটি প্রথম পাওয়া যায়। বর্তমানে চীনে এটি প্রধান কোভিড-১৯ স্ট্রেইনে পরিণত হয়েছে এবং জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির হার বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এয়ারপোর্ট পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টটি মার্চের শেষ থেকে শনাক্ত হতে শুরু করে। ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই, নিউ ইয়র্ক, ওহাইও, রোড আইল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটনসহ কয়েকটি রাজ্যে এ পর্যন্ত এনবি১৮১ -এর কেস পাওয়া গেছে। যদিও সংখ্যা এখনও কম।
ভ্যাকসিন কি কার্যকর?
এনবি১৮১ মূলত ওমিক্রন পরিবারের অংশ, ফলে বর্তমান ভ্যাকসিন ও পূর্ববর্তী সংক্রমণের মাধ্যমে গঠিত প্রতিরোধ ক্ষমতা গুরুতর অসুস্থতা থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে।
মার্কিন বিশেষজ্ঞ কমিটি মে ২২ তারিখে বৈঠক করে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা ফাইজার ও মর্ডানা তৈরি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনগুলোর ডেটা পর্যালোচনা করেছে, যেগুলো এলপি৮১ টার্গেট করে বানানো—এটি এনবি১৮১ -এর কাছাকাছি। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনগুলো এনবি১৮১ ও বর্তমানে লক্ষ্যভুক্ত জেএন১-এর বিরুদ্ধে কিছুটা বাড়তি সুরক্ষা দিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে আপাতত জেএন১-কেন্দ্রিক ভ্যাকসিন দিয়েই চলতে হবে, এবং এলপি৮১ বা এনবি১৮১-এর জন্য আপডেট করা হবে কি না, তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি।
লক্ষণ কী কী?
এনবি১৮১-এর উপসর্গগুলো পূর্ববর্তী কোভিড স্ট্রেইনের মতোই—গলা ব্যথা, জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি। বর্তমানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করছে না। তবে জেনেটিকভাবে এই ভাইরাসটি কোষে ঢোকার ক্ষমতা আরও বেশি রাখে, ফলে সহজে ছড়াতে পারে।
কিভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
টিকা নেওয়ার মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থতা থেকে বাঁচার সুযোগ বাড়ে, বিশেষ করে বয়স্ক বা রোগপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এনবি১৮১ ওমিক্রনের অন্তর্ভুক্ত, তাই বর্তমান টিকাগুলো কিছুটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
তবে, টিকা নেওয়া হয়তো সবার জন্য সহজ হবে না। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ঘোষণা করেছেন, সিডিসি সুস্থ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য আর বার্ষিক টিকার সুপারিশ করবে না। এফডিএ জানিয়েছে, ভ্যাকসিন কোম্পানিগুলোকে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আরও গবেষণা করতে হবে।
ফলে বীমা কোম্পানিগুলো টিকার খরচ বহন নাও করতে পারে, এবং ব্যক্তিগতভাবে টিকা নিতে হলে খরচ পড়তে পারে।