ধর্ষণ ও মাদককাণ্ড: জাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

ধর্ষণ ও মাদককাণ্ড: জাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সকল আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের অপসারণ করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে গান, বক্তৃতা ও কবিতা পরিবেশনের মাধ্যমে এ প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেন সাংস্কৃতিক জোটের আন্দোলনকারীরা।

এসময় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- চলমান ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা এবং জড়িত সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে; যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে পূর্বের সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার পূর্বক দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে; হল থেকে অছাত্রদের বিতরণ করে সিট সংকট নিরসন করতে হবে; ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সমাবেশে ধ্বনির দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী তার বক্তব্যে বলেন, এই ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড নয়। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের তীব্র আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল অকার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ আসে কিন্তু ভুক্তভোগী তার অভিযোগের আশানুরূপ সুরাহা পান না। আমরা দেখেছি এই ধরনের অভিযোগ বারংবার আসার পরেও সে অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয় না। সাংস্কৃতিক জোট বলতে চায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে বিদ্যমান সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে ও আশু সুরাহা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে প্রশাসন চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসার পরেও চুপ করে বসে থাকে শিক্ষার্থীরা সেই প্রশাসনকে মান্য করে না। ধর্ষণকাণ্ডের পর থেকে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব থেকে যে পিছন গুটিয়ে চলে এসেছে তার দায় এই প্রশাসনকে নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল জনসাধারণের জন্য নিরাপদ করতে হবে। প্রশাসন যদি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের নিরসনে কাজ না করে তবে আমরা আরও কঠোর ভূমিকা নিতে বাধ্য হবো।

জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, যারা ধর্ষক তারা একদিনে ধর্ষক হয়ে উঠে নি। তাদের পেছনে আছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদদ তার পাশাপাশি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আস্থার ছায়াতল। এই আন্দোলন শুধু ধর্ষকের বিরুদ্ধে নয়, এই আন্দোলন সেসব অছাত্র, মাদক চোরাচালানকারী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যারা মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে এই ক্যাম্পাসে। এই আন্দোলন সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রশাসন যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনিকে তাদের ছায়তলে আটলে রেখে সুরক্ষ দেয়।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, আমরা জানতাম এই ক্যাম্পাসে রাতে-দিনে নারীরা সবসময় নিরাপদ। এই যে মোস্তাফিজ ও মুরাদ তারা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং ও গণরুম বন্ধ হয় নি এখনো। যে গণরুম বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটি মোস্তাফিজ ও মুরাদ তৈরি করছে সেই গণরুমকে বন্ধ করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান তার বক্তব্যে বলেন, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মূলত জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের উৎপত্তি। এই যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল তৈরি হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে। এখন আমরা সবাই জানি যে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর তো নেই, উল্টো ভিক্টিমদের ব্লেমিং করা হচ্ছে।

সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরন এহসান বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা যারা সংস্কৃতিকর্মী রয়েছি, শিল্পের মাধ্যমেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরতে চাই। গানই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, কবিতাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। গান এবং কবিতার মাধ্যমে আমরা বলতে চাই আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে যেমন- ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পূর্বোক্ত যে নিপীড়নের মামলা গুলো পড়ে আছে সেগুলোর সুষ্ঠু সুরাহা করা এবং হল থেকে অছাত্রদের বিতাড়িত করা।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি দিপঙ্কর চক্রবর্তী, জেইউডিএস এর সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদ জহির খন্দকার।

এসময় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মাহমুদুল হক মায়ানের লেখা ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরূপ কবিতা আবৃত্তি করেন নূর-ই-নাজনীন, এরপর একে একে প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন ধ্বনির দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবি প্রিয়ন্তী, সাংস্কৃতিক জোটের অর্থ সম্পাদক সুকন্যা।

এছাড়া ককবরক ভাষায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে গান পরিবেশন করেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জয়ন্ত ত্রিপুরা। এরপর একে একে গান পরিবেশন করেন ‘অবান্তর’ ব্যান্ডের ভোকাল নূর-ই-নাজনীন, চারুকলা ৪৫ ব্যাচের বকুলসহ আরও অনেকে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Scroll to Top