প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীনা স্পর্শে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে প্রোডাকশন (উৎপাদন) ইউনিটে পরিণত করা যাবে।
রোববার (১ জুন) ঢাকায় চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে চীনা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আসলে প্রধান উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেন।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও এসময় বলেন, তার দেশ কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মৎস্য ও গবেষণার ওপর বিশেষ নজর রেখে ব্যবসা ও বাণিজ্য বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমার সাথে যেসব চীনা কোম্পানি এসেছে তারা উত্তেজিত। বাংলাদেশের আগামীর উন্নয়নের ধারা প্রকাশ করেছেন। চাইনিজ কোম্পানিগুলো আমাকে বলেছিল, আপনাদের উদ্যোগেই তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেশি আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ভোক্তাদের কথা উল্লেখ করে চীনা মন্ত্রী বলেন, রাত ১০টার পরেও বাংলাদেশী মলে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখে তিনি মুগ্ধ এবং পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেছেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তাদের বাজারে পরিণত হবে।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে, গভীর সমুদ্র ও নদীর মৎস্যক্ষেত্রে অনাবিষ্কৃত বিশাল সুযোগ রয়ে গেছে। তিনি বলেন, চীনা স্পর্শের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে একটি উৎপাদন ইউনিটে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।
কৃষিজমি উন্নয়ন, জল সংরক্ষণ এবং রোপণ প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোর কথা উল্লেখ করে চীনা মন্ত্রী বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, কৃষিক্ষেত্রের কোন কোন স্থানে আমরা পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করতে পারি, তা জানতে আমরা আগ্রহী। আমি যেমন দেখছি, কৃষিকাজ শুধু একটি শিল্প নয় বরং সামাজিক সংগঠনের একটি রূপ।
তিনি মৎস্য ও সামুদ্রিক অর্থনীতিতে চীনা দক্ষতার কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা চান।চীনা মন্ত্রী বলেন, চীনা মাছ ধরার প্রযুক্তিতে বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে, বিশেষ করে গভীর জলে সামুদ্রিক মাছ ধরায়।
চীনা মন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ, এবং গবেষণা ও পণ্য বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এটি বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা যখন বাংলাদেশের পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে কথা বলেন, তখন চীনা মন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের বক্তৃতার দিকেও মনোযোগ দেন। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ, এবং গবেষণা ও পণ্য বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এটি বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতার পর চীনের পাট ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে বাংলাদেশের পাট পণ্য নিয়ে কিছু গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।
ওয়েন্টাও বলেন, আমাদের সহযোগিতা কেবল ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। আমাদের গবেষণায়ও সহযোগিতা করা উচিত। যদি বাংলাদেশ গবেষণা কাজে যোগ দেয়, তাহলে আমি মনে করি পাট আমাদের জন্য খুবই উপযুক্ত পণ্য হবে।প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে বাংলাদেশের পাট পণ্য ডিজাইনাররা চীনা বিশেষজ্ঞদের সাথে একসাথে কাজ করতে পারেন।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা চীনা মন্ত্রীর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনার কথা আমার কানে বাজে। তিনি চীনা মন্ত্রীকে তার সাথে এত চীনা বিনিয়োগকারী আনার এবং দিনের শুরুতে চীন-বাংলাদেশ সম্মেলনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে আবেগঘন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আপনার বক্তৃতা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এত বিনিয়োগকারী এসেছিলেন। এটি আমাদের জন্য একটি ভালো সংকেত, কারণ পুরো জাতি তা দেখছে।