দীর্ঘ এক মাস পর অপহরণ হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় এ ঘটনায় মূলহোতা মালেকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী হিমেল পরিবারের সঙ্গে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে থাকতেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী গত ২৬ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন।
পরিবারসূত্রে জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক ব্যবসায় হাত দেওয়া হিমেল গত ২৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নিজ প্রাইভেটকারে করে শেরপুরের উদ্দেশ্যে বের হন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন চালক সামিদুল। এরপর আর তার খোঁজ মেলেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও একমাত্র সন্তানের সন্ধান না পেয়ে মা তহুরা হক উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। হঠাৎ একদিন মায়ের মোবাইলে ভিডিও বার্তা আসে হিমেলের। তারপরই পরিষ্কার হয় হিমেলের অপহরণের ঘটনা।
ওই ভিডিও বার্তায় মাকে উদ্দেশ্য করে অপহৃত হিমেলকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়— “মা, মা, ও মা, ওদের ভাষা আমি বুঝি না মা। ওদের একজন শুধু বাংলায় কথা বলে মা। বাকিদের কথা বুঝি না মা। ওদের সবার কাছে অস্ত্র। কাল যদি না আসো মা, তাহলে ওরা আমার হাত-পা কেটে বাংলাদেশে ভাসিয়ে দেবে বলছে। কাল আসো মা। ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগবে টাকা পৌঁছে দিতে মা। কালই আসো, টাকা দিয়ে আমাকে নিয়ে যাও মা।”
একাধিক ভারতীয় মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ভুক্তভোগীর মাকে ফোন দিয়ে ছেলেকে মুক্ত করতে মুক্তিপণ হিসেবে দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। পরবর্তীতে বলা হয়— ৩০ লাখ টাকা না দিলে সন্তানের হাত কেটে হত্যা করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় অপহরণ মামলা হয়।
এ প্রসঙ্গে কমান্ডার মঈন বলেন, ঘটনার পর থেকে অপহৃত হিমেলকে উদ্ধারে ছায়া তদন্ত ও অভিযান পরিচালনা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
একই ঘটনায় অপহরণ চক্রের মূলহোতা মালেকসহ ৫ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকিসহ নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান এ র্যাব কর্মকর্তা।
এদিকে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
অপহরণ চক্রের সদস্য মাসুদ নামের একজনকে শরীয়তপুরের দূর্গম চর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে রুবিনা ও কামরুন্নাহারকে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়।
অপর দিকে স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর ভাসমান ট্রলার থেকে ভুক্তভোগী হিমেলের গাড়ি চালকসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। হাওর থেকে গ্রেফতারকৃতরা হলো- আব্দুল মালেক, গাড়ি চালক সামিউল, মানিক মিয়া এবং মোবারক হোসেন।
এছাড়া ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত গাড়িটি গাজীপুর থেকে উদ্ধার করেছে।