দর্শক ফেরাতে দেশীয় কৃষ্টি কালচার লাগবে – আনন্দ আলো

দর্শক ফেরাতে দেশীয় কৃষ্টি কালচার লাগবে – আনন্দ আলো

অভিনেতা ওমর সানী, নব্বই দশকে চলচ্চিত্রে এসে নায়ক হিসেবে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। এরপর খলনায়ক হিসেবেও বলিষ্ঠ অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন কাড়েন। সম্প্রতি তিনি ‘ডেডবডি’ নামের ভৌতিক গল্প ঘরানার একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।

প্রশ্ন: আপনার অভিনীত ‘ডেডবডি’ ছবিটি মুক্তি পেল, এ ছবি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ওমর সানী: এম ডি ইকবাল পরিচালিত ‘ডেডবডি’ একটি কমার্শিয়াল হরর মুভি। আসলে নতুন প্রজন্ম যেমন গল্প ও গানের ছবি দেখতে চায় এ ছবিটি ঠিক তাই। এতে সুস্থ বিনোদনের সব উপকরণই আছে। খুব মজার একটি সাবজেক্ট নিয়ে ছবিটি নির্মাণ হয়েছে। গানগুলোও বেশ শ্রুতিমধুর। এমন গল্পের ছবি এ দেশে আগে কখনো নির্মাণ হয়নি। আমার বিশ্বাস দর্শক ছবিটি দেখে নতুন কিছু পাবে।

সম্পর্কিত

প্রশ্ন: এ ছবিতে আপনার রূপায়িত চরিত্রটি কেমন?
ওমর সানী: আমি আমার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে এমন একটি অসাধারণ চরিত্র এ ছবিতে রূপায়ণ করেছি যা নেগেটিভও নয়, আবার পজিটিভও নয়। একেকজন দর্শকের কাছে চরিত্রটি একেক রকম মনে হতে পারে। একজন পূজারিকে ভুলবশত মানুষ ভাবে তার মধ্যে বিশেষ কোনো পাওয়ার আছে। কিন্তু সব পাওয়ারের মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা। এমন একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রে এ ছবিতে কাজ করে আমি তৃপ্ত।

প্রশ্ন: এমন চরিত্র পছন্দ হওয়ার কারণ?
ওমর সানী: দেখুন সব ধরনের চরিত্রের প্রতি শিল্পীদের আগ্রহ থাকে। একজন শিল্পী হিসেবে আমারও তাই আছে। দিনশেষে নতুন ডায়মেনশন আছে এমন একটি ভালো গল্প, চরিত্র ও ভিন্নধর্মী কাজের প্রতি আমার ক্ষুধা থেকেই এ কাজটি আমি করেছি।

প্রশ্ন: বর্তমানে চলচ্চিত্রের গল্পে পরিবর্তন আসছে?
ওমর সানী: হ্যাঁ, আমি মনে করি বর্তমান সময়ে আমাদের চলচ্চিত্রের গল্পে পরিবর্তন আসছে। আর এতে দর্শক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমি বলব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নানা বাইন্ডিংসের কারণে সময়োপযোগী গল্প নিয়ে নির্মাতারা এগোতে পারেন না। ছবিতে এটা—ওটা দেখানো যাবে না, এমন গল্প দিয়ে ছবি নির্মাণ করা যাবে না, এসব বাধ্যবাধকতা নির্মাতাদের হাত পা বেঁধে দিচ্ছে। যে কোনো সেক্টরে প্রতিটি মানুষ তো আর ধোয়া তুলসী পাতা নয়। তাহলে সব ভালোমন্দ একসঙ্গে কোনো দেখানো যাবে না। এখন দর্শক নিমেষেই যে কোনো দেশের ছবি দেখতে পারছে। সব বিচার—বিবেচনা করতে পারছে। তাহলে আমাদের এমন বাধা—ধরা নীতিমালার ছবি দর্শক দেখবে কেন।

প্রশ্ন: কেমন ছবি নির্মাণ হলে দর্শক সিনেমা হলে ফিরবে?
ওমর সানী: আমাদের ছবিতে আমাদের দেশের কৃষ্টি কালচার থাকতে হবে। বাঙালিয়ানার চিত্র থাকতে হবে। যতই ভিনদেশি গল্পের অনুকরণ করা হবে ততই দর্শক বিরক্ত বোধ করবে এবং তা ছুড়ে ফেলে দেবে। আমাদের দেশের মানুষ কি কখনো অন্য দেশের খাবারে অভ্যস্ত হবে? গত বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’ ছবিটি পুরোই বাঙালিয়ানা ঘরানার গল্পে নির্মাণ হয়েছিল বলেই দর্শক সেটিকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছিল। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরের হিট ছবিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সবই বাঙালি কৃষ্টি কালচারের ছবি। তাই দর্শক ফিরে পেতে এমন দেশি গল্পের ছবি প্রয়োজন। এক কথায় আঁতেল মার্কা গল্পের ছবিতে এ দেশের চলচ্চিত্রের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না।

প্রশ্ন: নতুন শিল্পী সেভাবে তৈরি হচ্ছে না কেন?
ওমর সানী: কীভাবে হবে? আমাদের এখনকার শিল্পীদের অবস্থা দেখুন, কেউ গোপনে দু— তিনটা বিয়ে করছে। বিয়ে করতে না করতেই সংসার ভাঙছে। নানা নেগেটিভ কাজকর্ম আর স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে বর্তমানের শিল্পীরা যেভাবে নিজেদের ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণার জন্ম দিচ্ছে তাতে কি কোনো ভালো ঘরের ছেলেমেয়েকে তাদের অভিভাবকরা চলচ্চিত্রে আসতে দেবে? এসব কারণে এখন তো কোনো শিল্পীকে কেউ ঘর ভাড়াও দিতে চায় না।

Scroll to Top