ত্বক ফর্সাকারী বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে ছড়িয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যগুলো। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে নারীরা আটকে যাচ্ছেন এইসব চটকদার বিজ্ঞাপনের মায়াজালে। তবে কি ত্বকের রঙ ফর্সা করা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
এমনই সামাজিক মাধ্যমের অতি রঞ্জিত এক বিজ্ঞাপনের মায়াজালে আটকা পরে উমামা (ভিক্টিম)। সন্তান-স্বামী নিয়ে সংসারে ব্যস্ত উমামা খানিকটা ত্বক ফর্সা হওয়ার আশায় হাজার-হাজার টাকার পণ্য কিনে ডেকে এনেছেন ত্বকের ক্ষতি।

উমামা বলেন, আমি ন্যাচারাল গ্লো বাই ফারজান পেইজ থেকে তাদের বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য কিনেছিলাম। আমি ১ হাজার ৫০০ টাকার পণ্য কিনি। তখন সেই পেইজে অনেক বিজ্ঞাপন চলছিল, একটা কিনলে একটা ফ্রি। তাই আমিও অর্ডার করি। পণ্য হাতে পাওয়ার পর ব্যবহার প্রণালি জানতে কিউআর কোড স্কেন করে দেখি কিছুই আসে না। তখন বুঝতে পারি পণ্যগুলো নকল।
ত্বকের ক্ষতি হওয়ার পর প্রতিবাদ জানালে পেইজ থেকে হুমকির দেয়া নিয়ে উমামা বলেন, আমি যখন তাদের জানাই পণ্য সম্পর্কে, যে এটি নকল বা আমার ত্বকের ক্ষতি হয়েছে তখন তারা আমাকে বিভিন্ন প্রশাসনের হুমকি দিয়ে বলে আমার নামে মামলা করবে।

চ্যানেল আই অনলাইন চেষ্টা করে এমন ভুক্তভোগী নারীদের কাছে পৌঁছানোর। সেই থেকে নিজেদের সাথে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা জানতে চেয়ে পোষ্ট করা হয় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের ত্বক বিষয়ক গ্রুপগুলোতে। একাধিক সারা পেলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত পেইজগুলোর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি তারা, বরং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ব্লক করা হয় চ্যানেল আই অনলাইনকে।
ত্বকের জন্য এমনসব পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের থেকে হাজার-হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনলাইন নির্ভর এই পেইজগুলো।
এই পণ্যগুলোর প্রতি দিন দিন নারীদের ঝোঁক বাড়তে থাকা নিয়ে ফ্রেয়া মেকওভার এন্ড সেলনের উদ্যোক্তা ও মেকআপ আর্টিস্ট নারিসা নাশিন বলেন, বাংলাদেশ প্রথম থেকেই বিভিন্ন উপমহাদেশের শাসনের মধ্যে দিয়ে গেছে। যেখানে ক্ষমতাশীলরা দেখতে ফর্সা ছিলেন। তাই জন্য আমরা মনে করে থাকি ফর্সা মানে সুন্দর, ফর্সা মানে শক্তিশালী। আর আমাদের সমাজে মেয়েরা বিভিন্ন রকম পরিস্থিতর মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠে যার জন্য তাদের ভেতর ফর্সা হওয়ার প্রবণতা বেশি।

তিনি বলেন, মেয়েদের ফর্সা হতে হবে এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে যদি তারা, তাদের ভেতর যে আরও প্রতিভা আছে সেগুলোতে মনোযোগ দেয় তাহলে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে।
অস্বাস্থ্যকর এমন পণ্য ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে ত্বকের ভয়াবহ ক্ষতি করে বলছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহকারী অধ্যাপকডাঃ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান। তিনি বলেন, এই পণ্য দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বকের তিন স্তরে ক্ষতি হয়। প্রথমেই দেখা যায় সামান্য সূর্যের আলোতে গেলে ত্বক জ্বালা-পোড়া করছে। এরপর আরও সমস্যা যেমন, ব্রণ, ত্বক সময়ের আগে কুচকে যাওয়া এইসবও হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ত্বকের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন ডাক্তারের পরামর্শ। তার বাইয়ে ত্বকের যত্নে ভালো ফেসওয়াশ এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে এমন সব পণ্যের কেনা-বেচা ছড়িয়ে পড়লেও, পণ্যগুলোতে নেই বিএসটিআই অনুমোদন।
সরকারিভাবে কোনো কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে বিএসটিআই-এর পরিচালক সিএম প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে ত্বকের পণ্য বিক্রি করছে এমন পেইজগুলো খোলার ক্ষেত্রে সরকারের উচিত নীতিমালা প্রণয়ন করা।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন জানতে পারি এমন সব প্রতারণার কথা, আমাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা অ্যাকশন নিয়ে থাকি। তবে অনলাইলে এইসব পেইজকে ধরা কঠিন যেহেতু তাদের কোনো সরাসরি দোকান নেই। আবার অনেক পেইজ দাবি করা তাদের কাছে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে বিদেশি পণ্য বিক্রি করার, কিন্তু আমরা সঠিক তদন্ত ছাড়া এমন অনুমোদন দেই না।
ত্বকের উন্নতির আশায় নেয়া উদ্যোগে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এমন অভিজ্ঞতা অসংখ্য সৌন্দর্য প্রিয় নারী-পুরুষের। অন্তর্জালে অজস্র চটকদার বিজ্ঞাপনের জাল কেটে মানসম্মত পণ্য পাওয়া এখন খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার নামান্তর।