গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটবর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে তৃণমূলে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির কেন্দ্র তার তৃণমূলকে বুঝতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বছরের পর বছর জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে মাঠের কর্মীদের অংশ নিতে না দেয়ার কারণে দল হিসেবে দূর্বল হয়ে উঠছে বিএনপি।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের পর আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ভোটবর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ভোটের পরিবেশ না থাকা, জনগণের মাঝে দলের নৈতিক অবস্থান ও আস্থা সুদৃঢ় রাখা এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অটুট রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
তবে যারা এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে সুযোগ দেওয়া হবে। যদি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শেষ পর্যন্ত কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়গুলো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ইস্যুতে কী করা উচিত, সে সম্পর্কিত ২৬৮ জন নেতার মতামত তুলে ধরেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে দেখা যায়, ২৫৮ জন নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। বাকি দশজনের মতামতও ছিল মিশ্র।
যদিও মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন। দলের সিদ্ধান্তের আগেই নির্বাচন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ যুবদলের সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম জুয়েল। ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগেও দেখা গেছে তাকে।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে এবং তাদের সংঘবদ্ধ করতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি। খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন বিএনপির তিন নেতা। ডুমুরিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে আগ্রহী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান।
একই পদের জন্য গণসংযোগ করছেন জেলা বিএনপি নেতা মোল্লা আবুল কাশেমের ছেলে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মুনিবুর রহমান নয়ন।
মুনিবুর রহমান নয়ন বলেন, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে গণসংযোগ ইতোমধ্যে শেষ করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। দল যদি নির্বাচনের বিষয়ে নমনীয় থাকে, তাহলে প্রার্থী হবো।
তৃণমূল চাওয়ার পরেই কেন্দ্র কেনো অনড় প্রশ্নে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গায়েস্বর চন্দ্র রায় বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশের মানুষ বিএনপির ডাকে ৭ জানুয়ারি ভোটবর্জন করেছিল।
জনগণের সেই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। এ কারণে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কিছু না জানিয়ে গোপনে নির্বাচন করে।
গত পৌরসভা নির্বাচনে চুপিচুপি নির্বাচন করেছিল। গণমাধ্যমকে নানা কৌশলে এড়িয়ে তারা নির্বাচনে বরাবরই অংশ নেন। যদিও মুন্সিগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মাহবুব আলম স্বপন বলেন, ‘বিএনপির কোনও নেতাকর্মী এই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিস সিদ্দিক মনে করেন বিএনপি তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে। কোন রাজনৈতিক দল যদি দীর্ঘসময় ধরে জনবিচ্ছিন্ন থাকে তবে মাঠে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না। সেটা ফিরিয়ে আনতেও সময় লাগে। ফলে বিএনপির উচিত তৃণমূল কী চায় সেটা খোঁজ রাখা।