জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিমকে যৌন হয়রানি ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে মিমকে সহযোগিতা না করার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিমকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে জুনায়েদ হালিম এমন অভিযোগকে অস্বীকার করে- এর পিছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে, বলে জানান। তাছাড়া তার অব্যাহতির বিষয়টি ‘পাবলিক ডিমান্ড পূরণ করেছে’ বলেও দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বার্তা২৪.কম’র এই প্রতিবেদকের সাথে।
মিমকে অসহযোগিতার বিষয় অস্বীকার করে অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি মিমকে কোনো অসহযোগিতা করি নি। আমি আমার জায়গা থেকে তাকে সাহায্য করেছি। ফাতিমা আমিন ম্যাডামকে অনুরোধ করেছি তার মিড সেমিস্টার নেওয়ার জন্য। ভাইবাতেও তাকে হেল্প করেছি তবুও সে কোনো উত্তর করতে পারে নি। এজন্য সে ফেল করেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে নভেম্বরের ৮ তারিখে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সে আমাকে প্রায় ৭ মাস পরে ২০২০ সালের জুন মাসে অভিযোগ জানিয়েছে। তখন আমি তাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেই। কিন্তু সে আমাকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। মিম তার অন্য দুই বন্ধুর উপস্থিতিতে আমাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে।
জুনায়েদ হালিম বলেন, সে আমাকে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কিছু বলেনি। যেগুলো সে লিখিত অভিযোগপত্রে পরে উল্লেখ করেছে, সেগুলো আমায় জানায়নি। শুধু বলেছিল ফ্রেন্ডশিপ করতে চায়। তখন আমি তাকে বলি যে শুধুই ফ্রেন্ডশিপ নাকি ফ্রেন্ডশিপের ঊর্ধ্বে কোনো কিছু। সে বলে যে শুধুই ফ্রেন্ডশিপ। তখন আমি তাকে বলি মৌখিক অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারবো না। তুমি লিখিত অভিযোগ দাও। তাহলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবো।
যদি সহযোগিতা করে থাকেন তবে আপনার অসহযোগিতা প্রমাণ হলো কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। সাদেকা হালিম ম্যাডাম হয়তো পছন্দ করেননি। ওই মেয়েটা যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সে পরিস্থিতিতে পাবলিক পারসেপশন, পাবলিক সিমপ্যাথি বা পাবলিক ডিমান্ডের জায়গা থেকেই এটা করা হয়েছে। কারণ, অবন্তিকার ঘটনা ঘটার পরেই এটা সামনে নিয়ে এসেছে। পাবলিক সিমপ্যাথি কাজ করেছে তার জন্য। আমাকে অব্যাহতি দিয়ে পাবলিক ডিমান্ড পূরণ করেছে, সেটাও হতে পারে। সাদেকা হালিম, উনি আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন, ঠিক আছে।
তিনি আরও বলেন, আজকেও পরীক্ষা হয়েছে। আমি পরীক্ষা নিয়েছি। এক ব্যাচ পরীক্ষা দিয়েছে, আরেক ব্যাচ ক্লাস করেছে। ডিপার্টমেন্টের কার্যক্রম স্মুথলি (সহজে) চলছিলো, এখন ডিজরাপটেড (বিঘ্নিত) হবে। নতুন কেউ আসলে ঝামেলা হবে। এখন আমি টিচার হিসেবে কন্টিনিউ করবো। নতুন কেউ আসলে তাকে মানিয়ে নিতে, অরগানাইজ (সংগঠিত) করতে কষ্ট হবে। আমি চেষ্টা করবো তাকে সাহায্য করার।
এদিকে মূল অভিযুক্ত প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী কাজী ফারজানা মিমকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, সিন্ডিকেট সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের (১৩তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। অবন্তিকার আত্মহত্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা সিন্ডিকেটে উপস্থিত সকল সম্মানিত সদস্যকে অবহিত করা হয়।