ঢাকা: ঢাকার ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর প্রত্যেকের রক্তেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যেখানে মধ্যম মাত্রা ছিল ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিডিসি নির্ধারিত ঝুঁকির সীমা অতিক্রম করে। ফলে সিসা দূষণের কারণে শিশুদের জীবন সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভায় ২০২২–২০২৪ সালে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় আইসিডিডিআর’বি ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০০৯–২০১২ সালের আরেকটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা বলা হয়, ‘ঢাকার বস্তি এলাকার ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা ছিল প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি।’
যেসব শিশু সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে, তাদের রক্তে সিসার মাত্রা অন্যদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।
সিসা পাওয়ার উৎসের মধ্যে আছে- লেড অ্যাসিড ব্যাটারি তৈরির বা রিসাইক্লিং কারখানা, সিসাযুক্ত রং ও প্রসাধনী, রান্নার ভেজাল হলুদের মতো খাদ্যদ্রব্য, ঘরোয়া ধূমপান ও দূষিত ধূলিকণা।
আইসিডিডিআর’বি -এর হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে বলেন, ‘সিসা দূষণ বাংলাদেশের অন্যতম মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলেও তা বহু ক্ষেত্রেই অবহেলিত। বিশেষ করে কারখানার আশপাশের দরিদ্র শিশুদের জীবন সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে।’
আইসিডিডিআর’বি-র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে সিসাযুক্ত লেড ক্রোমেট মিশ্রণের বিষয়টি চিহ্নিত করার পর ২০১৯ সালে যেখানে ৪৭ শতাংশ নমুনায় সীসা পাওয়া যেত। সরকারি নজরদারি ও আইন প্রয়োগের ফলে তা কমে ২০২১ সালে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে।’
আইসিডিডিআর,’বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘সিসা নীরবে শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করে, দেহে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে এবং জাতির ভবিষ্যৎকে পিছিয়ে দেয়। তাই আমাদের এখনই সিসা নির্গমণকারী উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’