এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণে মারা গেছেন ২৬৮ জন। এখন পর্যন্ত একক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে অক্টোবরের ২৪ দিনে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ৮০ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আগস্টে ২৭, জুলাইয়ে ১২, জুনে ৮, মে মাসে ১২, এপ্রিলে ২, মার্চে ৫, ফেব্রুয়ারিতে ৩, জানুয়ারিতে ১৪ জন মারা যান। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ২২৫ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষা বিদায় নিলেও এখনো বৃষ্টি ও গরম পরিবেশ থাকায় এডিস মশার প্রজনন অনুকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিস মশাবাহী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর পুরুষরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হলেও বেশি মারা যাচ্ছেন নারীরা। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ নারী ও ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া নারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩৫ বছরের নারীর মৃত্যু হয়েছে বেশি। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট নারীর মৃত্যু ১৪৩ জন। যার মধ্যে ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪৯ জন। এছাড়া ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী ২০ জন।
এছাড়া পুরুষ-নারী মিলিয়ে এবছর ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছেন। এই বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৬৩, আর মৃত্যু ৫৫।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। অন্যদিকে, মৃত্যু বেশি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। উত্তর ও দক্ষিণে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কাছাকাছি। উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১ হাজার ৩১৪ জন এবং দক্ষিণে ১০ হাজার ৯৯৭ জন। দক্ষিণে মৃত্যু ১৩৩ জন। উত্তরে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ, সেখানে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮২৬ জন, মৃত্যু ২৬ জনের।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্ত ৮ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮২৬ জন, মৃত্যু ২৬ জনের। বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত ৪ হাজার ৭০৪ জন, মৃত্যু ৩২ জনের। খুলনা বিভাগে আক্রান্ত চার হাজার ৬৫৩ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ১৬ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৪৭২ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এছাড়া রংপুরে ৮৫৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫০৭ জন ও সিলেট বিভাগে ১৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই তিন বিভাগে কেউ মারা যাননি।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমি দুই মাস আগেও বলেছিলাম এই মৌসুমে ডেঙ্গু বাড়বে। এখন ডেঙ্গু আগামী কয়েকদিন আরও বাড়বে। এই মুহূর্তে সিটি করপোরেশনের জোরেসোরে কাজ করা দরকার। হট স্পট ম্যানেজমেন্ট, লার্ভা ম্যানেজমেন্ট, লার্ভা সোর্স ম্যানেজমেন্ট– এই তিনটা বিষয়ে এখন গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। স্থবির তাদের কার্যক্রম। তবে স্থানীয় সরকার, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা জনপ্রতিনিধিদের এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। অক্টোবর পর্যন্ত মশারি ব্যবহার করতে হবে, দায়িত্ব নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে। এছাড়া জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।
এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৮১ জন।