প্রাণঘাতী ডায়াবেটিস মানুষের শরীরের হরমোনজনিত অসুখ। ইনসুলিন হরমোন শরীরে কম বের হলে বা তৈরি না হলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ডায়েট হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্য আপনার কিডনি, হার্ট, লিভারে সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতিদিন একটু দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
তবে এই খাবার হতে হবে চর্বি বা ননিবিহীন দুধের তৈরি খাবার। বিশ্বখ্যাত ডায়াবেটোলজিয়া সাময়িকীতে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে লো ফ্যাট বা ননিবিহীন পনির ও দইয়ের ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজতে গিয়ে এই ফলাফল পাওয়া যায়।
গবেষকেরা বলছেন, যারা সপ্তাহে অন্তত ১২৫ গ্রাম পরিমাণ ননিবিহীন দই গ্রহণ করেন, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ কম। দুধে যে প্রোবায়োটিক আছে, তা বিপাক ক্রিয়ার সব অঙ্গকে সুস্থ রাখে, ভিটামিন কে ও ভিটামিন ডি বিপাক ক্রিয়াকে সচল রাখে। গবেষকেরা তাই আহারের পর বা নাশতা হিসেবে প্রতিদিন খানিকটা ননিবিহীন দই বা পনির খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারা এই দই খেতে পারে। যারা আইবিএসের রোগী বা ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম যাদের রয়েছে অথবা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স যাদের রয়েছে, তারা যদি দই খায়, তাদের খুব সহজেই ল্যাকটোজের ডাইজেশন হতে পারে। হাড়ের বিভিন্ন ক্ষয়রোগজনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে দই খুব ভালো একটি পথ্য। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এ ছাড়া যাদের অস্বাভাবিক হাই ব্লাড প্রেশার রয়েছে অথবা যাদের হাইপারটেনশন পেশেন্ট বলা হয়, তারাও চাইলে দই খেতে পারে। কেননা দই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে এবং এরা চাইলে প্রতিদিনই টক দই অথবা কম মিষ্টির দই খেতে পারে।
দই হল এক ধরনের দুগ্ধ জাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়ার গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। ল্যাক্টোজের গাঁজনের মাধ্যমে ল্যাক্টিক এসিড তৈরি করা হয়, যা দুধের প্রোটিনের ওপর কাজ করে দইয়ের স্বাদ ও এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ প্রদান করে। মানুষ ৪৫০০ বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং তা খেয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতেই এটি পরিচিত। পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে এর সুনাম আছে। দই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২-এ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পুষ্টিবিদেরা সবসময়ই টক দই খেতে পরামর্শ দেন।
টক দই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও হেলদি খাবার, কারণ এতে আছে দরকারী ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ ইত্যাদি। এটি দুগ্ধযাত খাবার ও দুধের সমান পুষ্টিকর খাবার। এমনকি এটি দুধের চাইতে ও বেশি পুষ্টিকর খাবার হিসাবে গণ্য করা হয়। কারণ দুধের চাইতে বেশি। জেনে নিন টক দইয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঠান্ডালাগা, সর্দি ও জ্বর না হওয়ার জন্য এটি ভালো কাজ করে। এছাড়া দই দেহের রক্তের শ্বেত কণিকা বাড়িয়ে দেয়, যা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস ডায়েটের মধ্যে রাখতে হবে টক দই। আসলে টক দইতে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে ল্যাকটোব্যাসিলাস। সেই ল্যাকটোব্যাসিলাস শরীরের কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সাহায্য করে। এছাড়া এই খাবারটির ক্যালোরি খুবই কম। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে এই খাবার খেতে পারেন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তারাও কিন্তু টক দই খেতে পারেন। কারণ, টক দইয়ে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি টক দইয়ে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যেটা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক দইয়ের কোনও বিকল্প নেই। কারণ, টক দই খুব ধীরে ধীরে ব্লাড সুগার বাড়ায়, যেটা আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খুব উপকারী।
শরীরের ওজন কমায়
ওজন কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করতে থাকেন অনেকেই। ওজন কমানোর মূল হাতিয়ার হিসেবে টক দইয়ের জুড়ি নেই। টক দইয়ে ফ্যাট অনেক কম থাকে। খাবারের সঙ্গে দই খাওয়া হলে তা দেহের চর্বি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। এতে দেহের চর্বি কমে এবং সার্বিক ভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
জন্ডিসের সমস্যা দূর করে
যারা দীর্ঘদিন জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছে অথবা যারা হেপাটাইটিসের পেশেন্ট, তাদের জন্য দই খুব ভালো একটি খাবার। যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছে, তারা দই খেলে এ সমস্যা দূর হতে পারে। সুতরাং একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে আমাদের প্রতিদিনই এক কাপ করে দই খাওয়া উচিত, যা থেকে আমরা কিছুটা হলেও ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারব।
হাড়কে মজবুত করে
দইয়ে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’। দুটি উপাদানই হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত দই খেলে হাড় মজবুত হবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
টক দইয়ের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাড়িয়ে হজম শক্তি বাড়ায়।
ত্বকের জন্য উপকারী
দইয়ের উপাদান ত্বককে মসৃণ করে। দইয়ের ল্যাকটিক এসিড ত্বককে পরিষ্কার করে এবং মৃত কোষ দূর করে।
উপকারী ব্যাকটেরিয়া
দইয়ে রয়েছে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া গুলো দেহের ক্ষতি করে না বরং হজমে সহায়তা করে। এ ছাড়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে দইয়ের ব্যাকটেরিয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি শারীরিক সমস্যা। টক দইয়ের ল্যাকটিক কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এ ছাড়া ও নিয়মিত টক দই খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
কোলন ক্যানসার দূর করে
পাকস্থলীর নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে দই। বিশেষ করে ল্যাকটোজের প্রতিসংবেদনশীলতা,কোষ্টকাঠিন্য, ডায়রিয়া, কোলনক্যান্সার ও অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী দই।
স্ট্রোক এবং হৃদপিণ্ডের ঝুঁকি কমায়
টক দইয়ে ফ্যাট অনেক কম থাকে এবং টক দই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম যা রক্তের কোলেস্টরল কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। আর এ কারণে কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা, স্ট্রোক এবং হৃদপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
রক্ত চাপের সমস্যা দূর করে
উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দূর করতেও টক দইয়ের জুড়ি নেই। নিয়মিত টক দই খাওয়ার অভ্যাস কোলেস্টরল কমায় এবং সেই সঙ্গে কমায় উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি।
আইএ