এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর সমন্বয়ক সারজিস আলম রংপুরে আসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
সারজিস আলমকে পুলিশ মহাপরিদর্শক সফরসঙ্গী করে রংপুরে আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। অপরদিকে শেখ হাসিনা সরকারকে বৈধতা প্রদানকারী জাতীয় পার্টিসহ সকলকে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয়ক সারজিস আলম।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সারজিসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভ : শেখ হাসিনার দোসর জাতীয় পার্টিকে কড়া হুশিয়ারী দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়া সকল রাজনৈতিক দলকে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেন তিনি। শনিবার বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক প্রাঙ্গনে ‘রাষ্ট্র পূর্নগঠনের তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সারজিস আলম বলেন, জাতীয় পার্টি যদি বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা না করলে আওয়ামী লীগ ওই সংসদে নূন্যতম বৈধতা পেত না। এই সুবিধাবাজরা নিজেরা বিরোধী দলের ভূমিকায় আসে একটি গাড়ি পাওয়ার জন্য, মন্ত্রীপাড়ায় একটি বাড়ি পাওয়ার জন্য, কিছু বেতন পাওয়ার জন্য, এমপি’র সিট পাওয়ার জন্য, টেন্ডারবাজি করার জন্য, চাঁদাবাজি করার জন্য, সিন্ডিকেট করার জন্য। এখন এই ভন্ডরা ভাল সাজছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই ওই খুনি শেখ হাসিনাকে পার্লামেন্টে যারা বৈধতা দেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে কাজ করেছে, তারা প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসনার দোসর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সকল দোসরের ভূমিকার জন্য আজকে দেশের এ অবস্থায়। আমাদের দুই হাজার ভাই-বোনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলেও তাদের দোসররা একটি মরণ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা জানে না তাদের বিষদাঁত থাকলেও তাদের শত বিষদাঁত ভেঙে ফেলার জন্য অসংখ্য জিনিষ আছে আমাদের কাছে। বিগত ১৬ বছরের ৩টি নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের ভাইদের যে নিমর্ম নির্যাতন করা হয়েছে, তখন সেই দোসররা কোথায় ছিল। আমার কলেজ পড়ুয়া ভাইদের শিবির ট্যাগ দিয়ে জেলে পুরেছিল তখন দোসররা কোথায় ছিল।
সারজিস আলম বলেন, আমরা জীবন দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এসেছিলাম। দ্বিতীয় স্বাধীনতার সর্বোচ্চ স্থায়ীত্বের জন্য, স্টাবলিশের জন্য আমরা আবারও জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। যে কোন প্রয়োজনে এক ঘন্টার নোটিশে আমরা ঢাকা থেকে রংপুরের রাজপথে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করবো। আপনার আমাদের প্রথম সারিতে পাবেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল পার্কের মোড় এলাকায় প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ‘ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন। মোস্তফার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন। হৈ হৈ রই রই, জাতীয় পার্টি গেল কই। আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালী না রাজপথ, রাজপথ, রাজপথ’ শ্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় পার্টির প্রতিবাদ : জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করায় গত ১৪ অক্টোবর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সভা করে সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় পার্টি মুখোমুখি অবস্থান করে। সারজিস-হাসনাতকে অবাঞ্ছিতের ঘোষণার মধ্যে শনিবার পুলিশ মহাপরিদর্শকের সফর সঙ্গী হিসেবে রংপুরে আসেন সারজিস আলম। এর প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করে নগরীতে বিক্ষোভ করে জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলামের সাথে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে যান সারজিস আলম। এরপর আইজিপি’র সাথে মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগদেন তিনি। এ খবর শুনে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয় থেকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বাঁশ হাতে মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা সারজিসের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর নগরীর পায়রা চত্ত্বরে সমাবেশে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, গুটি কয়েক সমন্বয়ক নামে কুলাঙ্গাররা বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্নভাবে স্টেটমেন্ট দিচ্ছে আর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তোতা পাখির মতো তা ফলো করছেন। এভাবে কোন দেশ চলতে পারে না, কোন প্রশাসন চলতে পারে না।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। সেই দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশ চলবে। তারা একটি রোডম্যাপ দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি ৫-১০ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে? তাদের কাজ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সচিবালয়কে রিফর্ম করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সমস্ত সংস্কারের দায়িত্ব তো বাংলার মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে দেয়নি। আমরা চাই সংস্কার রাজনৈতিক দলের নেতারাই করবে।
মোস্তফা বলেন, সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে অবাঞ্চিত ঘোষণার পর রংপুরে আসলে তাদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম। কিন্তু তারা আজ পুলিশের আজিপির ছত্র ছায়ার কারণে ছাড় পেয়ে গেল। আজ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, কিন্তু আমরা জানি না কিসের ইন্ধনে কার ইন্ধনে কার নির্দেশে তারা সারজিসকে রংপুরে নিয়ে আসলো। জাতীয় পার্টি যেকোন পরিস্থিতি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমরা সংঘাতের রাজনীতি পছন্দ করি না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির ও সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা।