চার মাস ধরে বেতন বকেয়া এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

চার মাস ধরে বেতন বকেয়া এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট

সপ্তাহ পেরোলেই রমযান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু গেল অক্টোবর মাসের পর এখনও বেতন পাননি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই রমজানে মাসে অনিশ্চিতায় মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন তারা।

৩৫ মি.মি. সিনেমা নির্মাণের সময় কাঁচা ফিল্ম বিক্রয় ও ল্যাব প্রিন্ট থেকে এফডিসি বেশ বড় অংকের টাকা আয় করতো। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি আসায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া এফডিসি ভবন নির্মাণের জন্য তিনটি ফ্লোর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির আয় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

বর্তমানে এফডিসিতে শুটিং ফ্লোর, ক্যামেরা ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, বিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দেয়ার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়। তার বিপরীতে ২১২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল আনুষাঙ্গিক মিলে মাসে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। আয় কমতে কমতে এফডিসি এখন চরম সংকটে।

সর্বশেষ এলিভেট এক্সপ্রেস এর জন্য এফডিসি’র কিছু জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ সরকার কর্তৃক যে ৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছিলো এফডিসিকে। তা এফডিআর করে রাখে এফডিসি কর্তৃপক্ষ। এ এফডিআর থেকে ঋণ নিয়ে গেল ৮ মাস যাবত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছে এফডিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্তমানে আর কোন ঋণ নেওয়ার কোন সুযোগ না থাকায় নতুন করে দুই মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, এর আগে তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়েছিল, সেটি গেল অক্টোবর মাসে আমরা পেয়েছি। এখন আবার চার মাসের বেতন বাকি পড়েছে। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান পাবো।

জানা গেছে, শুধু বেতন ভাতা নয়, ফান্ডের অভাবে গত চার পাঁচ বছরে অবসরে যাওয়া এফডিসির ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ছুটি নগদায়ন এবং গ্র্যাচুয়িটি বাবদ পাওনা ১৩ কোটি টাকা এখনও বুঝে পাননি।

২০০৮-০৯ অর্থ বছর পর্যন্ত এফডিসি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। বছরে ৪০-৫০ কোটি টাকার উপরে লাভ করেছে। ৩৫ মি.মি. ক্যামেরার যুগে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। ২০১০ এর পর থেকে দেশে ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবসা শুরু হলে এফডিসি পিছিয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেরিতে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি আনে। ফলে ততদিনে ব্যবসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যায়। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে পড়তে থাকে। একসময় যে প্রতিষ্ঠান সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে, সেটি ২০১৫ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা নিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙ্গিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা এনে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। কিন্তু তা সময় মত পাওয়া না যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অবস্থা নাজুকজ।

এফডিসি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠান রাজস্বখাতভুক্ত হলেও একমাত্র এটিই এর বাইরে। যার কারণে অবসরের পর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনও পাচ্ছেন না।

এএফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারাবাংলাকে জানান, তারা তথ্য মন্ত্রণালয়কে বহুবার লিখিতভাবে তাদের সমস্যা সমাধানের আবেদন জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় তাদের আবেদনের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কেন অর্থ ছাড়ে এত গড়িমসি করছে তা তা তাদের জানা নেই।

সারাবাংলা/এজেডএস

Scroll to Top