চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম চার দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে, বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
শনিবার (৩১ মে) ইউএনবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের ফটক বন্ধ থাকায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীরাও ফেরত যেতে হয়েছে। অচলাবস্থা শেষে চিকিৎসাসেবা কবে চালু হবে, সে বিষয়েও কিছু বলছে না কর্তৃপক্ষ। এর আগে বুধবার (২৮ মে) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও চার দিন ধরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রেখেছে কতৃপক্ষ।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসছেন। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে যেতে পারছেন না তারা, গেইটের বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যেতে হচ্ছে।
তবে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও। জুলাই যোদ্ধা মনির নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কি আর করবো ভাই বলেন? কাকে দুঃখের কথা বলবো? চার দিন ধরে হাসপাতাল বন্ধ, চিকিৎসা সেবা বাদ দেন। খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাসায় চলে আসতে হয়েছে।’
হাসপাতালের কনসালটেন্ট সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলম মৃধার নির্দেশনায় আমরা চিকিৎসকরা কেউ হাসপাতালে যাচ্ছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন ওনার নির্দেশনাতেই সেবা দিতে যাব।’
তিনি জানান, ‘২৮ মে জুলাই আন্দোলনে আহতরা তাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং একসময় আমাদের স্টাফদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেদিন সেবা চালু ছিল। তবে ২৯ মে থেকে পুরোদমে সেবা বন্ধ।’
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত কাজে ফিরতে চাচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাইনি।’
দ্রুতই চিকিৎসা সেবা চালু করতে চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’
গত বুধবার (২৮ মে) চিকিৎসা সংক্রান্ত ত্রুটি হচ্ছে- এই অভিযোগে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও স্টাফদের হামলা করে জুলাই আন্দোলনের আহতরা। এতে চিকিৎসকসহ প্রায় ১৫ জন স্টাফ আহত হন। এরপরই চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায় সেবা কার্যক্রম।
এর আগে, গত রোববার (২৫ মে) চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেন। তাদের অভিযোগ- উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন আহতরা। এক ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর হাসপাতাল সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর বুধবার সকাল থেকে নিরাপত্তার দাবি তুলে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতালের কর্মচারীরা। এরপরেই, হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন জুলাই আন্দোলনে আহতরা।