ঘন কুয়াশায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি চলাচল বন্ধ

ঘন কুয়াশায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি চলাচল বন্ধ

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, ঘড়ির কাটায় তখন বেলা ১টা বেজে ৪১ মিনিট। ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি চৌকস বিমান অবতরণ করে ঢাকা বিমানবন্দরে (তেজগাঁও বিমানবন্দর)। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিমায় বের হয়ে আসলেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, ৭ কোটি মানুষ ফিরে পেলো তাদের অভিভাবক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এর মধ্যে দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

সেদিন লাখো মানুষের পদচারণায় বন্ধ রাজধানীর সকল রাস্তাঘাট। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান সব জায়গায় বিপুল মানুষের সমাহার। বন্ধ দোকানপাট, অফিস-আদালত। চিড়া, মুড়ি ও গুড় নিয়ে অপেক্ষা একজন মানুষের। যার বজ্রকণ্ঠে উদ্দীপ্ত হয়েছিল একটি জাতি, দেশের তরে জীবন দিতে পিছপা হয়নি একটি প্রাণও। ২৯০ দিন পর আবারও এই মাটির সন্তান ফিরে এলেন এই মাটিতে।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এর আগেই ২৫ মার্চের দিবাগত রাতে তিনি ঘোষণা দেন স্বাধীনতার। বাঙালি জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী। চালায় গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাঙ্গালিরা। চূড়ান্ত প্রতিরোধের মুখে প্রায় ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ আর ৩ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আসে রক্তমাখা কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

তবে সেদিন স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পায়নি এ দেশের ৭ কোটি মানুষ। অপেক্ষা ছিল একজন ব্যক্তির। তিনি এলেন, এলেন বিজয়কে পূর্ণতা দিতে, এলেন মানুষকে আনন্দ অশ্রুতে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ দিতে। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গেলেন প্রায় ৪ ঘণ্টায়। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালবাসা, অশ্রু মাখা সিক্ত অভিবাদন নিয়ে।

দেশের মাটিতে পা রেখে কাঁদলেন, কাঁদাইলেন, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে এলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠে। আবারও তার স্বভাব সুলভ বজ্র কণ্ঠে, অশ্রুসিক্ত চোখে জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি, বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।

তিনি বললেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।‘

দেশে ফিরে সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেখিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার কাজও শুরু করেছিলেন। তবে তা আর এগোয়নি। দেশকে আবারও খামছে ধরে শকুনেরা। মাত্র তিন বছর সাত মাসের মাথায় কিছু বিপথগামী সেনা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। থামিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কার্যক্রম।

Scroll to Top