ক্যাম্পাসে কেন ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন | চ্যানেল আই অনলাইন

ক্যাম্পাসে কেন ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন | চ্যানেল আই অনলাইন

ক্যাম্পাস রাজনীতির কথা আসলে মূলত ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতাদের উদাহরণ পেশ করা হয়। পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের লড়াই-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তার এক দশক পরে আশির দশকের শেষ দিকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়। নিঃসন্দেহে এগুলো ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

তবে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি চান, কী চান না- এই প্রশ্নটি উন্মুক্ত পরিসরে ছুঁড়ে দিলে ‘চান না’র পক্ষে ভোট বেশি পড়বে, এটি চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।

কারণ ছাত্ররাজনীতির নামে দলীয় লেজুড়বৃত্তির যে কদর্য চেহারাটি বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়েছে, তাতে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো অভিভাবকই এখন আর চান না, তার সন্তান ক্যাম্পাসে গিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হোক।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাম্পাসে যদি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে কী করে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং শিক্ষার্থীরাই বা কীভাবে রাষ্ট্রীয় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সম্পর্কিত বিবিধ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন? তাছাড়া, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই কি গণরুমে নির্যাতন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অন্যায় আচরণ বন্ধ হবে? শিক্ষকরাজনীতি বন্ধ হবে?

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশের এক জনপ্রিয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলে আলোচনা করেন। উত্তর দিয়েছেন বিভিন্ন প্রশ্নের।

প্রশ্ন: বুয়েট চালায় কারা?

সাদ্দাম হোসেন: প্রশাসনিকভাবে যারা বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন তারাই প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে অপশক্তির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন পর্যালোচনা করে জানা যাচ্ছে, তাদের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত হচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সুযোগে শিক্ষার্থীদের সাথে অবাধে মেলা-মেশা করছে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী। যেমন, বুয়েটের বিভিন্ন গ্রুপে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। লিফলেট বিতরণসহ যেকোন কার্মকাণ্ড সহজে চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গী ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো।

এছাড়া ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে যে আন্দোলন চলমান রয়েছে তাতেও মূল চাবিকাঠি পরিচালনা করছে অপশক্তি। আর তাদের সাথে শুধুমাত্র বুয়েট ছাত্র জড়িত বিষয়টি এমন নয়, এর পিছনে বিভিন্ন গোষ্টিও জড়িত রয়েছে।

প্রশ্ন: বুয়েটে আন্দোলন নিয়ে ছাত্রদের দু’টি পক্ষ দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি থাকবে, নাকি থাকবে না দু’পক্ষের সমাধান কী দাঁড়াবে?

সাদ্দাম হোসেন: এটি সংখ্যা বা গ্রুপ দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই থাকবে। এটি সাংবিধানিক অধিকার। এটি ছাত্রদের মৌলিক অধিকার। ক্যাম্পাসে অবশ্যই ছাত্র রাজনীতি থাকতে হবে। ক্যাম্পাস রাজনীতি হচ্ছে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের মাধ্যম। ক্যাম্পাস রাজনীতির মাধ্যমে অতীতের ন্যায় দক্ষতা সম্পূর্ন নেতৃত্ব উঠে আসবে।

তবে বুয়েট প্রশাসন তাদের নিজস্ব নীতি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। ছাত্ররাজনীতির নতুন নীতি তৈরি করতে পারে। ক্যাম্পাসের স্বার্থে কিছু বিধি-পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। ক্যাম্পাসে কিভাবে রাজনীতি পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা এবং গবেষণা আরও উন্নত হতে পারে সেই বিষয়ে একটি নীতি থাকতে পারে।

প্রশ্ন: বুয়েটে কেন ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন?

সাদ্দাম হোসেন: প্রত্যেক ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকতেই হবে, এটি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ থাকতে হবে, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে কথা বলার মতো ব্যক্তি থাকতে হবে। ছাত্রদের লিডারশিপ হয়ে এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর এসবের মাধ্যম শুধুমাত্র ছাত্ররাজনীতি। আমরা বুয়েট থেকে ছাত্ররাজনীতি’র নতুন নিয়ম-পদ্ধতি ধীরে ধীরে সারাদেশের সকল ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে দিতে চাই। বুয়েটে নির্ধারিত নিয়মে চালু হোক ছাত্ররাজনীতি।

এসময় তিনি শুধুমাত্র ছাত্ররাজনীতি নয়, আমরা বুয়েটে ছাত্র সংসদের নির্বাচনও করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানায়।

পৃথিবীর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি রয়েছে। তাহলে বুয়েট কি পৃথিবীর বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান? আমরা প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানাই, অনতিবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাস রাজনীতি চালু করতে হবে। প্রয়োজনে কিভাবে রাজনীতি পরিচালিত হবে সেই বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করে দিতে পারে।

এরআগে গতকাল রোববার সকাল থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সেখানে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার নাটক বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। বুয়েটের এই সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থী, সংবিধান পরিপন্থী, শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত।’

তবে ছাত্ররাজনীতি ফেরার বিষয়ে বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছ বুয়েট প্রশাসনকেও। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হবে বলেও জানান উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি না করলে শিক্ষার্থীদের চোখ খুলবে না, দেশের প্রতি তাদের প্রেম আসবে না। এই বিষয়গুলো তারা (শিক্ষার্থী ও শিক্ষক) চিন্তা করে যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে (ছাত্র) রাজনীতি ওপেন হতে পারে।’

২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

উপাচার্য বলেন, ‘তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদেরই আবার উদ্যোগী হতে হবে।’

Scroll to Top