এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উদযাপন উপলক্ষে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন প্রশিক্ষণ, মুগ্ধতা স্মৃতি বৃত্তি প্রদান ও একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিসিসিএফ এর সভাপতি রোকশানা আফরোজ। প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে হারমনি ট্রাস্ট।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ক্যান্সার এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল এবং অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্যান্সার আক্রান্ত ১৪ বছরের শিশু ইমন হোসেন ও সামিয়া সুলতানার অভিভাবকদের হাতে মুগ্ধতা স্মৃতি বৃত্তি তুলে দেওয়া হয়। এ সময় মুগ্ধতার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, অনুষ্ঠানে এসে আমি বিষণ্ণ হয়েছি, আবার উজ্জীবিতও হয়েছি। আমার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ক্যান্সারে মারা গেছেন। আমাদের সমাজে এখনও অনেক কুসংস্কার রয়েছে, যার কারণে নারীরা অসুস্থ হলেও তা প্রকাশ করতে চান না। যখন তারা প্রকাশ করেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। নিজেকে ভালোবেসে নিজের শরীর নিজে পরীক্ষা করতে হবে। আমি এই সংগঠনের সাথে থাকতে এবং কাজ করতে চাই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক ছাত্রীকে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত পরিবারগুলো জানেন এই বোঝা বহন করা কতটা কষ্টকর। নিজেরা সেল্ফ এক্সামিনেশন করে সুস্থ থাকলে নিজের ও পরিবারের বোঝা কমবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, প্রত্যেক ক্যান্সার ইউনিক। একেকজনের একেক রকম উপসর্গ থাকতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে এটি না ছড়ায়। এক লাখ মানুষের মধ্যে ৫৩ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ৩৪ শতাংশ নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা যান। নিজে পরীক্ষা করে আগেভাগে এটি শনাক্ত করা গেলে এড়ানো সম্ভব।
ডা. এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত না হলে আজকে এখানে যে সম্মান পেলাম, তা পেতাম না। ক্যান্সার আমাকে খ্রিস্টের সম্মান দিয়েছে। আমার পরিবারের ৪ জন সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। নিজেরা পরীক্ষা করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।
ক্যান্সারে মারা যাওয়া এক শিশুর মা ও প্রশান্তির সংগঠক সায়মা সাফীজ সুমি বলেন, ক্যান্সার আমার জীবনকে নতুনভাবে জানতে ও শিখতে শিখিয়েছে। দুঃসময়ে হাত না মিলিয়ে আগে থেকে সচেতন হতে হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আন্তরিকভাবে, হৃদয় দিয়ে।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের আরও অনেক হাসপাতাল দরকার, একইসাথে মনোজগতের পরিবর্তনও দরকার। নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে।
সভাপতি রোকশানা আফরোজ বলেন, আমরা ট্যাবু ভাঙবো। আমি একজন চতুর্থ পর্যায়ের ক্যান্সার যোদ্ধা। আমরা চাই সবাই মিলে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে। পরিবারের কাউকে হারানোর বেদনা যারা বুঝেছেন, তারাই জানেন এটি কত কষ্টের। ক্যান্সার আমার জীবনের একটি অংশ, পুরোটা নয়। মেডিকেল ট্রিটমেন্টের চেয়ে মানসিক সমর্থন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংগঠন ভালো-মন্দ যা-ই আসুক, সত্যকে সহজে গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানটি ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীদের সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিসিসিএফ সাধারণ সম্পাদক জাহান-ই-গুলশান শাপলা ।