‘জীবনের কষ্টগুলো হয় তো এখন দূর হবে। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে, এই কষ্টের শেষ হবে কবে। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছে। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে একটি স্থানীয় দোকানে পুলিশের চাকরির জন্য আবেদন করি। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করি নাই।’
হাসিমাখা মুখে কথাগুলো বলছিলেন, অটোরিকশা চালাক আইয়ূব নবীর ছেলে নাজমুল হোসেন।
তাদের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায়। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দিত নাজমুল ও তার পরিবার।
নাজমুল হোসেন বলেন, নিজ যোগ্যতায় আমি নিয়োগ পেয়েছি। কোনো লোক ধরতে হয়নি। ১২০ টাকা ছাড়া আরও কোনো টাকা আমার লাগে নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে মনে হচ্ছে বাবার কষ্ট একটু হলেও দূর করতে পারবো। সব সময় দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকবো।
নাজমুলের বাবা আইয়ূব নবী বলেন, ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। লেখাপড়া করে কিছু করতে পারবে কি না এ ভয়ে। কারণ এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলে টাকা লাগে, লোক লাগে মানুষের কাছে শুনি। কিন্তু এখন দেখি সব ধারণা ভুল। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো চিন্তাও করি নাই। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর স্বচ্ছভাবে পুলিশের চাকরি পরীক্ষা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিলশেডে ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্র্যাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী।
শুধু নামজুল হোসেন নয়, তার মতো আরও ৯০ জন ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।
জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইট ভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেন। তার ছেলে বিপ্লব হোসেন সদ্য পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন।
বিপ্লব হোসেন বলেন, আমার বাবা ইট ভাটায় কাজ করেন ৩০ বছর ধরে। অনেক কষ্ট করে বাবা দুইভাইকে মানুষ করাচ্ছে তা বলার মত না! বাবার কষ্টের ফল এখন দিতে পারবো। তারাও অনেক খুশি হয়েছেন। ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশের চাকরি হবে আমার নিজ যোগ্যতায় তা কখনো কল্পনাও করি নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়া গ্রামের মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার।
পুলিশে নিয়োগ পেয়ে সুমা আক্তার বলেন, মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মত পুলিশ সদস্য হব। তাই ছেট বেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মত পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তান হিসাবে মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার তেমনি আমিও সেবা করবো।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদেরকে বাছাই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে। নিয়োগ বোর্ডের যে সদস্য ছিল সবাই একদম স্বচ্ছ ছিল। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোনো প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে ৪ হাজার ২’শ জন আবেদন করেছিল। পরে ৩ হাজার ৮’শ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে চূড়ান্ত ভাবে চান্স পাওয়া ৯০ জনকে মনোনীত করেছি। এখানে পুরুষ ৭৬ ও নারী ১৪ জন মোট ৯০ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দরা।