দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট, বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠন ও রোজায় দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার সঙ্গে দলীয় কর্মীদের প্রার্থিতা উম্মুক্ত থাকায় অনেক জেলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার মনোমালিন্যও সৃষ্ট হয়েছে। এগুলো নিরসনে দল থেকে বার বার চেষ্টা করা হলেও কিছু কিছু জায়গায় কোনোভাবেই সংঘর্ষ থামানো যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি সমস্যার ধরন অনুযায়ী, সেসব সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের কর্মতৎপরতা বাড়ানো, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো অতিদ্রুত গঠন, রোজায় সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল রাখা, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস উদযাপন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ সমসাময়িক আরও বিষয় সভায় আলোচনা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়। কিছু কিছু জায়গায় তা খুনোখুনির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষের ঘটনায় বার বার কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য কমানোর জন্য কথা বলেছেন দলটির খোদ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি এবং উপজেলায় কমিটি আছে ৪৯৫টি। এসব কমিটির মধ্যে প্রায় ৩০টির বেশি জেলা-উপজেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও হয়নি কাউন্সিল। কাউন্সিল হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি ১৮টি জেলা ও মহানগর কমিটিতে। খোদ রাজধানী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর। সর্বশেষ, কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বরে। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে। তবে মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে আর কমিটি দিতে পারেনি দলটি।
এছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের মতো দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বেশিরভাগই চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। দলকে শক্তিশালী করতে সভায় এসব বিষয়েও কথা হতে পারে বলে জানা যায়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন করা নিয়ে মনোমালিন্য ও দোষারোপ বাদ দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যৌথসভায় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব সংঘাত না হয়। সংঘাতে যেই জড়িত থাকুক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
এছাড়াও তিনি যেসব ইউনিটে কাউন্সিল হয়নি সেসব ইউনিটে দ্রুত কাউন্সিল করে কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। তবে সে নির্দেশনার পর এক মাস পার হলেও কমিটি গঠনে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ আগামী উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও ৯ মার্চের দুটি সিটি করপোরেশনসহ জেলা পরিষদ ও পৌরসভার বিভিন্ন উপনির্বাচনেও কোনে প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি দলটি। সমস্যা দ্রুত নিরসনে জোর দিচ্ছে দলটি।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই। বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
দলীয় সভা বা কেন্দ্রীয় কমিটির সভা এগুলো দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি। সামনে রমজান। নেতাকর্মীরা কীভাবে কাজ করবেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, এগুলো আলোচনা করবো। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কিছু মনোমালিন্য আছে, সেগুলো নিয়েও কথা হবে। কোন জেলায় কী অবস্থায় আছে, সেগুলো জেনে দলীয় ফোরামে আমরা আলোচনা করবো। সেজন্য সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সবার নিজ নিজ এলাকার বিষয়গুলো জেনে পার্টি মিটিংয়ে যেন আলোচনা করি।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসে আমরা বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে নেতাদের ঢাকায় এনে সভা করবো।