এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা কমাতে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ভুল এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগে পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় ডেঙ্গু শনাক্তে ব্যবহৃত তিনটি পদ্ধতির কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পদ্ধতিগুলো হলো- এনএস১ আইসিটি, এনএস১ এলিসা এবং আরটি-পিসিআর।
গবেষণায় দেখা গেছে, এনএস১ এলিসা পদ্ধতি ৯৪% নির্ভুলতার সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্ত করতে সক্ষম, যেখানে প্রচলিত এনএস১ আইসিটি পদ্ধতির কার্যকারিতা মাত্র ৫৬%। বিশেষত, ২০২৩ সালের মহামারীর সময়, ডেনভি-২ সংক্রমণের ক্ষেত্রে এনএস১ আইসিটি পরীক্ষার ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট একটি বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। ফলে অনেক রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন।
অন্যদিকে, আরটি-পিসিআর পদ্ধতিকে ডেঙ্গু শনাক্তের “গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড” ধরা হলেও, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দক্ষ জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পিসিআর মেশিনগুলো ব্যবহার করে ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব।
এই গবেষণায়, ২০২৩ সালের মহামারীর শীর্ষ মৌসুমে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ভাইরোলজি বিভাগ সন্দেহভাজন ডেঙ্গু রোগীদের কাছ থেকে নমুনা ( সিরাম) সংগ্রহ করে। এই রোগীরা জ্বরের পাঁচ দিনের মধ্যে টেস্ট করতে আসেন।
গবেষকদের মতে, ডেঙ্গু নির্ণয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে এনএস১ আইসিটি, এনএস১ এলিসা এবং আরটি-পিসিআর কার্যকর পদ্ধতি। দ্রুত ফলাফল এবং সম্পদস্বল্পতা পরিবেশ ক্ষেত্রে এনএস১ আইসিটি সবচেয়ে উপযোগী যা প্রাদুর্ভাবপূর্ণ এলাকায় বা দূরবর্তী অঞ্চলে প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, এনএস১ এলিসা পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাণগত ফলাফল পাওয়া সম্ভব, যা ভাইরাসের পরিমাণ নির্ধারণ এবং রোগের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়ক।
কিন্তু পিসিআর এর চেয়ে এলিসা করতে কম টাকা লাগবে তাই এটি করাই সুবিধা। বর্তমান গবেষণার ফলাফল বিশেষত সেই রোগীদের জন্য একটি নতুন ডেঙ্গু পরীক্ষার কাঠামো প্রস্তাব করবে, যাদের ডেঙ্গুর ক্লিনিক্যাল লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও আইসিটি পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
আশা করা হচ্ছে, এই গবেষণার ফলাফল এলিসা এর মাধ্যমে প্রাথমিক ডেঙ্গু নির্ণয়ে মূল্যবান তথ্য প্রদান করবে এবং বাংলাদেশে এনএস১ আইসিটি পরীক্ষার বিষয়ে চলমান বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব ল্যাবরেটরিতে এলিসা মেশিন থাকায় আমরা খুব সহজেই এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি।