সুবর্না হক
শীতকালটা বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময়টায় প্রকৃতিতে ঝড়-বাদলের আশংকা থাকে না। বরং প্রকৃতি থাকে শান্ত। যদিও শীতের প্রকোপ দেখা দেয়। কিন্তু শীতকালটাই বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত সময়। সাধারণত শীতকালেই ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। কাজেই তাদেরকে সাথে নিয়ে বেড়াতে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়। একা বেড়ানোর মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। বেড়ানো মানেই দলবল সাথে থাকা। ঘুরব, ফিরবো, আড্ডা দিব। এক সাথে খাব। এক বিছানায় গাদাগাদি করে ঘুমাব। তবেই না ভ্রমনের আনন্দ পাওয়া যাবে। ভাবছেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন? তার আগে প্রস্তুতির কথা বলি।
আগে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে সত্যি সত্যি বেড়াতে যাবেন কিনা। সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এবার ভাবুন কতজন এক সাথে যাবেন। অর্থাৎ দলের সদস্য সংখ্যা কেমন হবে। এবার ভাবুন কোথায় বেড়াতে যাবেন? ধরা যাক, কক্সবাজারে যাবেন। এবার প্রথম কাজ হবে যাওয়া আসার টিকেট সংগ্রহ করা। বাসে, ট্রেনে অথবা লঞ্চে নাকি আকাশ পথে যাবেন সেটা আগে ঠিক করে নিন। সেই অনুযায়ী আগে-ভাগেই টিকেট সংগ্রহ করুন। ৮/১০ জনের একটি দল হলে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে পারেন। মাইক্রোবাসে করে গেলে যাতায়তের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাবেন। কক্সবাজারে নেমে ওই মাইক্রোবাসেই পছন্দের জায়গাগুলোতে ঘুরতে যেতে পারবেন। তবে বাসে চড়ে কক্সবাজারে যাওয়ার পর ওখানেই আপনি ভাড়ায় মাইক্রোবাস পাবেন। যাওয়ার আগে ফোনে মাইক্রোবাস ভাড়া করে রাখতে পারেন। কক্সবাজারে নিশ্চয়ই কোনো একটা হোটেলে উঠবেন। হোটেল বুকিংটা আগেই করে ফেলুন। হোটেল থেকেই আপনি মাইক্রোবাস সার্ভিসের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে পারবেন।
তো, সব কিছু হয়ে গেল। কোথায় যাবেন, কিভাবে যাবেন, সেখানে কোথায় থাকবেন, কি ভাবে ঘুরবেন? সবকিছুই ফাইনাল। এবার নিজেরা এটকু প্রস্তুতি নিন। শীতে ভারী গরম কাপড়ের দরকার হয়। তাই বলে গাদাগাদা ভারী কাপড় সাথে নিবেন না। তাতে ব্যাগ অনেক ভারী হয়ে যাবে। বরং হিসেব করেই শীতের কাপড় সাথে নিন। বডি লোশন অথবা শীতে শরীরে ব্যবহার করা যায় এমন ক্রিম সাথে রাখুন। একটি ছোট্ট ব্যাগে প্রয়োজনীয় ঔষধ যেমন ওরস্যালাইন, নাপা জাতীয় ট্যাবলেট, সুই, সুতা, বোতাম সাথে রাখুন। এখন তো হাতের মোবাইল সেটই ক্যামেরার কাজও করে। তবুও ভালো মানের একটি ক্যামেরা থাকলে সাথে নিন। ভ্রমণে তোলা ছবিই আসলে ইতিহাস হয়ে ওঠে
সাধারণত কক্সবাজার ভ্রমণের জন্যে সবাই শীতকালকেই বেছে নেন। কিন্তু কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে বছরের যে কোন সময়ই আপনি বেড়াতে পারবেন। সময়ে সময়ে প্রকৃতি বদলায়, প্রকৃতির সেই রূপের প্রভাব থাকে কক্সবাজারেও। তাই ভিন্ন স্বাদ নিতে ঝুম বর্ষায় বা শরতের নীল আকাশের সাথে মিতালির জন্যে চলে যেতে পারেন কক্সবাজার, অথবা হেমন্তের এক পূর্ণিমার রাতে কক্সবাজারের রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে অবশ্যই। তবে হ্যা, শীতকালে কক্সবাজারে ঘোরার মজাই আলাদা।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত।
সম্পর্কিত
ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাস পাবেন। বাস ভেদে ভাড়া ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা সহ বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন : কক্সবাজারের হোটেলগুলোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় দেড় লক্ষ। অর্থাৎ কক্সবাজারের হোটেল গুলো একদিনে দেড় লক্ষ পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করতে পারে। তবুও আগেই হোটেল বুকিং দেয়া ভালো। কারণ শীত মওসুমে গোটা কক্সবাজার জুড়ে পর্যটকদের ভীড় বাড়ে। কাজেই আগে বুকিং না দিলে থাকার জায়গা পেতে অসুবিধা হবে।
কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে অনেকে হোটেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময়টা পার করেন দেন। যদি কক্সবাজারে গিয়ে ঘুমাবেনই তাহলে এতো কষ্ট করে সেখানে যাবারই বা দরকার কী? বাসায় ঘুমানো আর কক্সবাজারে হোটেলে ঘুমানো তো একই কথা। আমরা কক্সবাজারে যাই মূলত সমুদ্র দেখার জন্য। দিনের বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের রূপ হয় বিভিন্ন রকমের। সকালে এক রকম, আর সন্ধ্যায় আরেক রকম। কক্সবাজারে গিয়ে সমুদ্র সৈকত থেকে সুর্যাস্তের সেই মনকাড়া দৃশ্য দেখবেন অবশ্যই। তা নাহলে কক্সবাজারে যাওয়ার কোনো মানেই দাঁড়াবে না। সুর্যাস্ত আপনাকে অনাবিল আনন্দ দিবে। পারলে মোবাইল ক্যামেরায় বিশেষ এই মুহূর্তটিকে বন্দী করে রাখতে পারেন।
কি খাবেন : কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে। ভাত: ২০-৪০ টাকা, মিক্সড ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০টাকা (৮-১০ আইটেম), লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা), কোরাল/ভেটকি: ১৫০ টাকা (প্রতি পিচ), গরু: ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন), রপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২জন খাওয়ার মত), ডাল: ৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন হান্ডি রেস্তারা থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরাণী চেখে দেখতে পারেন। আর কেওএফসি তো আছেই।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজার বেড়াতে গেলে শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, ঘুরে দেখবেন আশেপাশের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। আপনার সময় ও সুবিধা অনুযায়ী আগেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। আশেপাশে দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো: হিমছড়ি, ইনানী সমুদ্র সৈকত, মহেশখালী, রামু বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, সেন্টমার্টিন।