ঋতুপর্ণা চাকমা, বাংলাদেশের মেসি…

ঋতুপর্ণা চাকমা, বাংলাদেশের মেসি…

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে কাল থেকে আনন্দের বন্যা। ওই গ্রামের মেয়ে ঋতুপর্ণ চাকমার কল্যাণে কাল থেকে যে আনন্দে ভাসছে বাংলাদেশ ফুটবল। গতকাল মিয়ানমারের বিপক্ষে বাছাই পর্বের ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন ঋতুপর্ণা। তার দুই গোলেই নারী এশিয়া কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশ এশিয়া কাপ খেলার সুযোগ পায়নি কখনো। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এর আগে বাছাই পর্বের কোনো ম্যাচে জিততেও পারেনি। সব মিলিয়ে ঋতুপর্ণার এই জোড়া গোল বাংলাদেশের জন্য বড়তি আনন্দের উপলক্ষ্যই বটে।

কাল মিয়ানমারের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। ম্যাচের ৭১ মিনিটে তার করা দ্বিতীয় গোলটা সকলের চোখে লেগে আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঋতুপর্ণার সেই গোলের ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল।

বক্সের খানিকটা ওপরে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার পাস দিয়েছিলেন আরেক ডিফেন্ডারকে। ঋতুপর্ণা ছুটে গিয়ে সেই বল কেড়ে নিয়ে ভোঁ দৌড়। তারপর আরও এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ-পায়ের অসাধারণ একটা শট নেন। বল প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে।

এই ম্যাচের পরই ঋতুপর্ণাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে ধারাবাহিক পারফর্মার রাঙামাটির এই মেয়ে। ঋতুপর্ণা এখন যেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর! ঋতুপর্ণাকে ‘বাংলাদেশের মেসি’ বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী উইংয়ের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ।

মিয়ানমার জয়ের প্রতিক্রিয়ায় কিরণ এমন কথা বলেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলেও উত্থানের হাওয়া চলছে। প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ ফুটবল দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দেশের ফুটবলকে নিয়ে বাড়তি উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে।

হামজার সঙ্গে ঋতুপর্ণার তুলনা করে প্রশ্ন করা হলে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেছেন, ‘দুই দলই আমাদের। তুলনার কিছু নেই। ঋতুপর্ণা বাংলাদেশের মেসি। হামজাও ভালো ফুটবলার কোনো সন্দেহ নেই। হামজাও আমাদের দেশের জন্য গর্বের। সামনে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আছে। আমার বিশ্বাস, সেখানেও হামজা ভালো করবে। ছেলেরাও এগিয়ে যাবে। ছেলে-মেয়ে দুটো দলই আমাদের, তুলনা করার কিছু নেই। কিন্তু আবারও বলছি, ঋতুপর্ণা আমাদের মেসি, এটা বলার অপেক্ষা নেই। ও যেভাবে বল টেনে নিয়ে যায়, মেসি ছাড়া তো আর কারও মতো নয়।’

‘মেয়েরা আমার কথা শোনে। ম্যাচের আগে আমি তাদের শপথ পড়াই, কথা বলি। আমি যা যা বলি, ওরা ঠিক সেগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করে। এ থেকেই বোঝা যায়, ওদের নিবেদন ও শৃঙ্খলা কতটুকু আছে। মিয়ানমার ম্যাচের আগে আমি তাদের বলেছিলাম ২০ মিনিটের ভেতর অবশ্যই গোল করবে। সেটার জন্যই মাঠে নামবে। এগিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ওদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য এটা তোমাদের করতে হবে। ঋতুপর্ণা কিন্তু ১৮ মিনিটে গোল করেছে। তারা সেই কথা রেখেছে এবং রুপনাকে যা বলেছি, গোলপোস্টে ঠিক সেটাই করেছে। প্রতিটা জিনিস যা যা বলেছি, সব খেলোয়াড় তা করেছে।’- যোগ করেন কিরণ।

কোচকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিরণ, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই পিটার বাটলারকে। তিনি অনেক ভালো কোচ। তিনি জানেন ডাগআউটে থেকে কীভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হবে এবং সেই কাজটাই করেছেন। উনার সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা সেভাবে এগিয়ে যাবো।’

Scroll to Top