স্থপতি কাজী ওয়াফিক আলম বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১৭সালে ডেনমার্ক এর অলবর্গ ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কোডেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু জলবায়ু সহনশীল ও পরিবেশ বান্ধব স্থাপনার ডিজাইন ও নির্মাণ করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন– মোহাম্মদ তারেক
জলবায়ু সহিষ্ণু, পরিবেশবান্ধব ও অংশগ্রহণ মূলক স্থাপত্য আমাদের কাজের একটি মূল লক্ষ্য জোর দিয়েই কথা গুলো বললেন স্থপতি কাজী ওয়াফিক আলম। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। ওয়াফিকের বাবার নাম কাজী খুরশীদ আলম। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান কোডেকের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। মা দেলোয়ারা খুরশীদ গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মাঝে সবার বড় স্থপতি কাজী ওয়াফিক। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। ছবি আঁকা থেকে তার আর্কিটেকচারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এস এস সি ২০০১ সালে ও ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। ২০১০ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন। পাশ করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগ দেন গ্রে স্কেল প্রতিষ্ঠানে। তারপর কয়েকটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
সম্পর্কিত



২০১৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ডেনমার্ক এর অলবর্গ শহরে। ২০১৭ সালে ডেনমার্ক এর অলবর্গ ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। দেশে ফিরে এসে তিনি যোগ দেন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার- কোডেক এ। বর্তমানে এই স্থপতি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে লার্নিং সেন্টার, টেকনাফ ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প, কক্সবাজার, চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস, টেকনাফ, ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প, কক্সবাজার, কমিউনিটি সেন্টার, হোয়াইখং ও হ্নীলা হোস্ট, উখিয়া, কক্সবাজার, পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী এর মসজিদ, তেলিপুকুর, ফকিরহাট উপজেলা বাগেরহাট, ব্রীজ স্কুল, মোংলার মাকারডন ও কানাই নগর, শরণখোলা ও সোনাতলা, রাংগাবালির গোহীনখালী, চরকানকুনি, সামুদাফৎ,মাদারবুনিয়া, দুর্যোগ সহনশীল গৃহায়ণ/সাইক্লোন রেজিলিয়েন্ট হাউজিং, রাংগাবালি, জলবায়ু সহনশীল গৃহায়ণ/ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট হাউজিং, বাগেরহাট, মোংলা, পাথরঘাটা, প্রতিবন্ধী ও শিশু বান্ধব টয়লেট চিতলমারি, রাংগাবালি, মোংলা, কোডেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাগেরহাট ও কুয়াকাটা।
স্থপতি কাজী ওয়াফিক আলম বলেন, সাধারণত স্থাপত্যচর্চা সমাজের বিত্তবানদের জন্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার কাছে স্থাপত্যচর্চায় সামাজিক দায়বদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি মনে করি, একজন স্থপতির কাজ শুধু শহরে বড় বড় ভবন ডিজাইন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। ২০০৭ সালে যখন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে, তখন আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ঝড়ের পর আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বাগেরহাট ও মংলায় একটি সংস্থার সাথে গৃহ পুনর্নির্মাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। সে সময় আমাদের উপকূলীয় জনপদের জীবন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় এবং একজন স্থপতি হিসেবে এখানে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।পরবর্তীতে, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে কাজ করার সুযোগ হয়। সেখানে আমাদের কাজ মূলত শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষা নিয়ে। বাঁশ, ছন ও অন্যান্য স্থানীয় উপকরণ দিয়ে আমরা ক্যাম্প গুলোতে লার্নিং সেন্টার, শিশু বান্ধব কেন্দ্র ও অন্যান্য অস্থায়ী স্থাপনার ডিজাইন ও নির্মাণ করেছি। জলবায়ু সহিষ্ণু, পরিবেশবান্ধব ও অংশগ্রহণ মূলক স্থাপত্য আমাদের কাজের একটি মূল লক্ষ্য। আমরা মংলা, শরণখোলা ও রাঙ্গাবালির দুর্গম এলাকায় ৮ টি স্কুল ডিজাইন ও নির্মাণ করেছি। এই স্কুলগুলোর ডিজাইন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও আমরা উপকূলীয় এলাকার জন্য রেজিলিয়েন্ট হাউজিং নিয়েও কাজ করছি।
ইটভাটার পোড়ানো ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে সিমেন্ট ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধি করা এবং এই ব্লক উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে আমাদের প্রকল্প চলছে। আমরা ভবিষ্যতেও এই ক্ষেত্রগুলোতেই কাজ করতে চাই, যাতে আরও বেশি মানুষের জীবনে আমাদের কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি।