ইয়োগা শুরুর আগে যে প্রস্ততিগুলো নিতে হয়

ইয়োগা শুরুর আগে যে প্রস্ততিগুলো নিতে হয়

ডা. ঐন্দ্রিলা আক্তার

পাঁচ হাজার বছরের পুরনো প্রাচীন বিজ্ঞান হলো যোগবিদ্যা, যা ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যোগবিদ্যার উপকারিতা নতুনভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর পাশ্চাত্য সমাজ যোগবিদ্যা শেখা এবং অনুশীলন করার প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠে। বর্তমানে যোগবিদ্যা ইয়োগা নামে সারা পৃথিবীতে ব্যপকভাবে অনুশীলন হচ্ছে। এটি এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ্ধতি যা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে শরীর ও মনের পাশাপাশি ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়। প্রাচীন ভারতে মানুষ আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্যে ইয়োগা অনুশীলন করত। বর্তমানে সুস্থতা এবং শরীর ফিট রাখার জন্য ইয়োগা অনুশীলনের গুরুত্ব বেড়েছে। ইয়োগা একটি ব্যপক ও বিস্তৃত বিজ্ঞান। ইয়োগা অনুশীলনের দুটি দিক রয়েছে। আসুন জানি এবং দেখি ইয়োগা শুরু করার নিয়ম, করার ধরণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা।

ইয়োগা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি একটি বিজ্ঞান। এর অনুশীলন করার শুরুতে, করার সময় এবং করার পরে কিছু নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়ম মেনে ইয়োগা করলে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না এবং ভাল ফল পাওয়া যায়।

ক) ঢিলেঢালা, নরম সুতি কাপড়ের পোশাক: ইয়োগা করার সময় ঢিলেঢালা, নরম সুতি কাপড়ের পোশাক পরতে হয় যাতে করে ত্বকের মধ্য দিয়ে সহজে বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে। এবং ইয়োগা করার সময় যে ঘাম হয় তা ভাল করে কাপড় শুষে নিতে পারে।

খ) পেট খুব ভরা বা খালি না থাকা: ভরা পেটে খাওয়ার তিন থেকে চার ঘন্টা পর ইয়োগা করতে হয়। খাওয়ার পর এই সময়টুকুতে খাবার পাকস্থলী থেকে নীচে অন্ত্রে চলে যায়। ফলে তখন ইয়োগা করলে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে ক্ষতি হবার ঝুঁকি থাকে না। আবার একদম খালি পেটে ইয়োগা না করে হালকা কিছু খেয়ে ইয়োগা করতে হয়। যেমন, ফলের রস, ফল, বাদাম, পানি। খালি পেটে শুরু করলে মাথা ঘোরাতে পারে। ক্লান্ত লাগে অনেকের।

গ) ব্লাডার খালি রাখা: ইয়োগা শুরু করার আগে প্রস্রাব করে ব্লাডার খালি করে নিয়ে ইয়োগা শুরু করতে হবে। কখনোই প্রস্রাব চেপে রেখে ইয়োগা করবেন না। এতে ইউরিনারি ব্লাডারের ক্ষতি হবে।

ঘ) ইয়োগা করার পরিবেশ: প্রাকৃতিক আলো বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে এমন জায়গায় বা ঘরে ইয়োগা করতে হয়। বদ্ধ, গুমোট, অন্ধকার স্যাঁতস্যাতে ঘরে বা জায়গায় ইয়োগা না করা ভাল।

ঙ) ইয়োগার স্থান: মেঝেতে মাদুর বা ইয়োগা ম্যাট বিছিয়ে বা চেয়ারে বসে অথবা শক্ত বিছানায় শুয়ে ইয়োগা করতে হয়। কোন ম্যাট বা মাদুর ছাড়া ইয়োগা করলে শরীরে আঘাত লাগতে পরে।

২. ইয়োগা করার সময় যা মেনে চলতে হয়

ক) শরীরের প্রতিটি অংশ নড়াচড়া করার সময় নিয়ম মেনে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া এবং ছাড়া।

খ) কথা না বলে মনোযোগ সহকারে অনুশীলন করা।

গ) অনুশীলন করার সময় শরীরের কোথায় কোথায় চাপ পড়ছে, ব্যথা লাগছে, হালকা লাগছে, আরাম লাগছে এসব অনুভূতি মনোযোগ সহকারে বোঝার চেষ্টা করা।

ঘ) প্রতিটি অংশ নাড়ানোর পর বা প্রতিটি আসন করার পর চোখ বন্ধ করে শরীর ঢিলা ছেড়ে তিন থেকে পাঁচবার বড় করে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া।

৩. ইয়োগা করা শেষ করে যা করতে হবে

ক) ইয়োগা সেশন শেষ করে দশ থেকে পনের মিনিট চোখ বন্ধ রেখে হাত পা ছড়িয়ে শরীর ঢিলা ছেড়ে শুয়ে থাকতে হবে। ইয়োগা করার সময় রক্ত চলাচল বাড়ে, বিভিন্ন হরমোন, এনজাইম, নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এসব উপাদান শরীরের প্রয়োজনীয় অংশে সঠিকভাবে সরবরাহ হতে সাহায্য করে কিছু সময়ের বিশ্রাম। এর পাশাপাশি শরীরকে আবার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে এসে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে বিশ্রামের এই সময়টুকু।

খ) বিশ্রাম শেষ করে এক গ্লাস পানি বা লেবুর শরবত বা ফলের জুস খাওয়া ভাল। কারণ ইয়োগা করার সময় ঘাম ঝরার ফলে তার সাথে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। তরল পানীয় শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

গ) ইয়োগা করার পর পরই গোসল না করে ত্রিশ মিনিট থেকে একঘন্টা সময় পর গোসল করা ভাল। এতে শরীরের তাপমাত্রার গতি স্বাভাবিক থাকে।

ইয়োগা করার জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এবং নিয়ম মেনে ইয়োগা করলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায় এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না। ইয়োগা করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ধারাবাহিক নিয়ম রয়েছে। আমার লেখা এবং উপস্থাপনায় এক এক করে আপনাদের জানাবো সেসব নিয়মগুলো। যাতে করে আপনারা ঘরে বসে সহজে নিয়ম মেনে নিয়মিত ইয়োগা অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ এবং ফিট রাখতে পারেন।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top