স্থপতি মুহতাদিন ইকবাল স্থাপত্য পেশা ও শিক্ষকতার সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে এই স্থপতি ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর স্থাপত্য বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি আধুনিক স্থাপত্য ঐতিহ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং প্রকাশনার সাথে যুক্ত আছেন। স্থাপত্য চর্চাও চলছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থপতি মুহতাদিন ইকবালের জন্মও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার বাবার নাম জাফর ইকবাল। তিনি একজন স্বনামধন্য প্রকৌশলী। মা নিশাত আরা খন্দকার স্বনামধন্য স্থপতি। তারা দুজনেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সুপরিচিত।
সেন্ট জোসেফ হাইস্কুল থেকে ইকবাল এসএসসি পাশ করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। পাশ করে বের হওয়ার পরপরই মুহতাদিন ইকবাল সহযোগী স্থপতি হিসেবে যোগ দেন স্বনামধন্য স্থপতি মামনুন মোর্শেদ চৌধুরী এবং স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ এর অধীনে ডি ডব্লিউ এম ফোর আর্কিটেক্টস-এ। সেখানেই তার স্থাপত্যচর্চায় হাতে খড়ি। এই প্রতিষ্ঠানে দুই বছর কর্মকালীন সময়ে মুহতাদিন ইকবালের সুযোগ হয় পুরস্কার প্রাপ্ত দুইটি ভবন কারওয়ান বাজারের ‘ডেইলি স্টার’ এবং গুলশান এভিনিউতে অবস্থিত ‘বে এজওয়াটার’ এর ডিজাইন ও নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকার। স্থপতি ইকবাল ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর স্থাপত্য বিভাগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একই বিভাগের অধীনে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জীবন ব্যাপী কাজের সংগ্রহশালা, তার আর্কাইভের দায়িত্বে আছেন। মাজহারুল ইসলাম ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক স্থাপত্য ধারার পথিকৃৎ এবং তার কাজ সমূহ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টেনটেটিভ লিস্টে স্থান করে নিয়েছে।
সম্পর্কিত
সম্প্রতি তিনি আধুনিক স্থাপত্য ঐতিহ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি উক্ত বিষয়ে বিভিন্নি গবেষণা এবং প্রকাশনার সাথে জড়িত আছেন তিনি। স্থাপত্য চর্চাও চলছে নিয়মিত। স্থপতি মুহতাদিন ইকবাল ও স্থপতি নাজলী হোসেন দুজনেই প্রাক্সিস আর্কিটেক্টস এর পরিচালক হিসেবে স্থাপত্য পেশা চর্চা করে থাকেন। ‘প্রাক্সিস আর্কিটেক্টস’ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে আগারগাঁওয়ে সিইজিআইএস ভবন, সিসিডিবি ক্লাইমেট টেকনোলজি পার্ক গাজীপুর, কফি বীন এন্ড টি লিফ আউটলেট এবং প্রস্তাবিত ফরচুন গ্রিন সিটি আবাসন অন্যতম। ব্যক্তিগত জীবনে স্থপতি মুহতাদিন ইকবাল এক সন্তানের জনক এবং স্থপতি নাজলী হোসেন তার সহধর্মিনী।
স্থাপত্য শিক্ষার্থী, তরুণ স্থপতি ও স্থাপত্যে শিক্ষকতা এ বিষয় গুলো সম্পর্কে স্থপতি মুহতাদিন ইকবাল বলেন, দীর্ঘদিন স্থাপত্য শিক্ষার সাথে সংযুক্ত থাকার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল স্থাপত্যের যাত্রার সাথে তরুণ যারা যুক্ত হচ্ছে তাদের সংস্পর্শে থাকা। স্থাপত্যের সাথে একজনের যাত্রার শুরু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে ঘটছে একটি স্থাপত্য স্কুলে ভর্তি হবার মাধ্যমে। স্থাপত্য শিক্ষা এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই ধরন দেশের প্রচলিত শিক্ষা ধারার চাইতে ব্যতিক্রমধর্মী। যে কারণে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। বিষয় হিসেবে স্থাপত্য অনেক বেশি মুক্তচিন্তা করতে শেখায় এবং তার জন্য প্রয়োজন হয় সকল বিষয়ে একটি সামগ্রিক জ্ঞান। এর পাশাপাশি স্থাপত্য শিক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রম। যারা স্থাপত্য বিষয়কে পেশা হিসেবে নিতে এবং স্থাপত্য পড়বার জন্য আগ্রহী, তাদের সকলের যে বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তা হল একাধারে বিজ্ঞানমনস্কতা এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্প মাধ্যম গুলোর সাথে পরিচিত। যেহেতু স্থপতিরা কাজ করে মূলত প্রান্ত ব্যবহার কারীদের জন্য কাজেই স্থাপত্য শিক্ষার সময় থেকেই মানুষের সাথে মিলেমিশে তাদের জীবনযাত্রা এবং আকাক্সক্ষা বুঝতে পারার চর্চা খুবই প্রয়োজন।
যে বিষয় গুলোতে আলোকপাত করা হলো সেই বিষয়গুলোর বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সম্পূর্ণতা পায় না, যে কারণে একজন স্থাপত্যের শিক্ষার্থীকে হতে হয় জ্ঞান আহরনের ক্ষেত্রে আত্মউদ্দীপক এবং আত্মনির্ভরশীল। পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন শেষে যখন শিক্ষার্থীরা পেশা জীবনে প্রবেশ করে সে সময় তাদেরকে পূর্বে অর্জিত গুণাবলীর পাশাপাশি রপ্ত করতে হয় পেশা সংশ্লিষ্ট দক্ষতা এবং দায়িত্ববোধ। একজন স্থপতির দেশ এবং নাগরিকের প্রতি দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত বেশি কারণে সে তার পেশার মাধ্যমে একাধারে মানুষ জীবন এবং তার যাপিত জীবনের ভৌত পরিবেশকে প্রভাবিত করে। স্থাপত্য ও নগরায়ন অত্যন্ত ওতপ্রোতভাে ব জড়িত হওয়ায়, স্থাপত্যের মাধ্যমে নগরায়নের বিরূপ প্রভাব যাতে না পড়ে এবং নিজের রচিত স্থাপত্যকর্ম যাতে কোনো ভাবেই পরিবেশের প্রতি হুমকি স্বরূপনা হয় সে বিষয়ে একজন স্থপতিকে সর্বদা অবগত থাকতে হয়। বিশ্বায়ন এবং এ আই এর যুগে প্রথাগত স্থাপত্য পেশা চর্চা বর্তমানে একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সকল তরুণ স্থপতির নিজেদেরকে এর জন্য প্রস্তুত রাখার একটি কার্যকরী উপায় হল নিজেকে পরিবর্তনের প্রতি উম্মুক্ত মনস্ক রাখা। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন নিজেদেরকে বিশ্বমানের স্থাপত্য চর্চার সাথে পরিচিত করা এবং এই লব্ধ জ্ঞানের দেশের অর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে প্রাসঙ্গিক অভিয়োজন। একজন স্থপতিকে দেশের ভৌত পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়, প্রয়োজন বোধে যা দেশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিকতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারার সক্ষমতাও অর্জন করতে হয়। একজন স্থপতি শুধুমাত্র একজন কারিগরি পেশাজীবী নন, তাকে সর্বোপরি হতে হয় সমাজের সংবেদনশীল একজন সদস্য।
স্থপতি মুহতাদ্দিন ইকবাল ইট, বালু ও কংক্রিটের মাঝেই খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই তার প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজ সহ প্রকৃতিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাজে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান।