জেদ্দা বন্দরে পৌঁছে ফ্রিম্যান ও তাঁর ক্রুরা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সম্মুখীন হন। সৌদি পুলিশ হজযাত্রীদের ইহরামের কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি করে রেখেছিল। অনেক হজযাত্রী দুর্বল, এমনকি কঙ্কালসার অবস্থায় ছিলেন। এই দৃশ্য ক্রুদের মনে গভীর বেদনার সৃষ্টি করে। গ্যাংওয়ে (জাহাজে ওঠার সিঁড়ি) নামানোর পর হজযাত্রীরা ধীরে ধীরে জাহাজে উঠতে শুরু করেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেককে সাহায্য করতে হয়। সব হজযাত্রী জাহাজে উঠতে অনেক সময় লাগে। অবশেষে গ্যাংওয়ে উঠিয়ে দীর্ঘ হর্ন বাজিয়ে সাদা রঙের সারধানা জাহাজ চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
জাহাজে একজন ইমাম ছিলেন, যিনি চমৎকার গলায় আজান দিতেন। প্রতিদিন নামাজের সময় তিনি জাহাজের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে আজান দিতেন এবং হজযাত্রীরা জাহাজের সামনের ডেকে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতেন। ডেকের কাঠের মেঝেতে নামাজের জন্য লাইন ধরে জায়নামাজ সাজানো থাকত।
অপুষ্টি ও ক্লান্তির কারণে অনেক হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাহাজের মেডিকেল স্টাফ সাধ্যমতো তাঁদের সেবা দিলেও চারজন হজযাত্রী মারা যান। তবে ফ্রিম্যান উল্লেখ করেন, নিয়মিত জাহাজের তুলনায় এই সংখ্যা ছিল অনেক কম। আরব সাগর ও ভারত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ইমামের নেতৃত্বে জানাজা পড়ে মৃত হজযাত্রীদের ইহরামের কাপড়ে কাফন পরিয়ে, ক্যানভাসে মুড়ে এবং ভারী সিসা বেঁধে ভারত মহাসাগরে সমাধিস্থ করা হয়।
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্লান্ত হজযাত্রীরা তাঁদের সামান্য মালপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে জাহাজ থেকে নামেন। হজ পালনের কঠিন ও কষ্টকর পরিশ্রম তাঁদের ফ্রিম্যান এবং জাহাজের ক্রুদের কাছে এক অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।
(সূত্র: পুণ্যপথের যাত্রীরা: হজ হজযাত্রী ও পথ,মুহাম্মদ সাঈদ হাসান শিকদার, প্রথমা প্রকাশন)