অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে জনআস্থা হারাচ্ছে: ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক | চ্যানেল আই অনলাইন

অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে জনআস্থা হারাচ্ছে: ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক | চ্যানেল আই অনলাইন

সরকার ৭ মাস পরেও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে জুলাই স্পিরিট হত্যা করছে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক। অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে জনআস্থা হারাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক এর আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার এর প্রেরিত এক সংবাদ বার্তায় এই এসব কথা বলেন। এতে স্বাক্ষর করেন ২৮ সদস্য।

বার্তায় বলা হয়, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা বিগত মাফিয়া সরকারের আমলে নিবর্তনমূলক আইসিটি (৫৭ ধারা) বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মজলুম। আমরা খুবই হতাশ হয়ে লক্ষ করছি যে, গণঅভ্যুত্থানের বাংলাদেশেও কুখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল তো হয়ই নাই বরং এই আইনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন থেকে এই আইনে মামলা নেয়া বন্ধ করার পরিবর্তে নিয়মিত মামলা নেয়া হচ্ছে, তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতারের তোড়জোড় করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটা প্রথম ও প্রধান কমিটমেন্ট ছিল সাইবার নিরাপত্তাসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার। সেই অগাস্ট মাসেই তারা তা ঘোষণা করেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকার অন্তত ৪ বার সময় নিলেও সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনো বহাল আছে। সর্বশেষ বিগত ২১ জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা স্পষ্ট ঘোষণা দেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আর তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেটা সম্পন্ন করে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইন বাতিলের ঘোষণা দিবেন। এরপর আবারো প্রায় দেড় মাস পার হলেও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাকী কাজ সম্পন্ন হয় নাই। আইনও বাতিল হয় নাই। মামলা বাতিলের কোন তালিকাও আমরা পাই নাই। বরং নিত্য নতুন মামলা নেয়া হচ্ছে।

আমরা ক্রমেই মনে করছি, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলে প্রকৃতভাবে সরকারের আন্তরিকতা, সিরিয়াসনেস, কর্মতৎপরতার ঘাটতি আছে। এই অবহেলা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে হত্যা করছে। সরকারের এই অযোগ্যতা, অদক্ষতার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছেন। এর বিপরীতে ষড়যন্ত্রকারীরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে খুনের ঘোষণা, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস ইত্যাদির তাণ্ডপ চালাচ্ছেন। পুলিশও সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার, জুলুম করতে অতি উৎসাহী। এবং তারা উপরোক্ত ফৌজদারি অপরাধ গুলোর ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

আমরা আরো মনে করি, বর্তমান সরকার প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন আবারো একটি ভুল উদ্যোগ হতে যাচ্ছে। জনমনে সর্বশেষ সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে আতংক আছে, প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন তার প্রভাব মুক্ত থাকবেনা। বরং সাইবার হ্যাকিং, অনলাইনে নারী নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত নিয়মিত আইনগুলোর আধুনিকায়ন বা একান্ত প্রয়োজনে সেগুলোর নতুন আইন বানানোই জনমনে আস্থার সঞ্চার করতে পারে। গণ অভ্যুত্থানের বাংলাদেশে জনগণ তাই প্রত্যাশা করে।

সর্বোপরি, অবিলম্বে সরকারকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে। এসব আইনের সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। ভুক্তভোগীদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। এবং সরকারের নিবর্তনমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতা কাঠামোকে জবাবদিহিমূলক করতে হবে।

স্বাক্ষরদাতাঃ
১। শহিদুল আলম, লোকচিত্রী
২। খাদিজাতুল কুবরা, শিক্ষার্থী, ঢাকা
৩। প্রীতম দাশ, সদস্য সচিব, ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক
৪। মঞ্জিলা ঝুমা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৫। জামাল মীর, সাংবাদিক, বরগুনা
৬। এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক, মালয়েশিয়া
৭। মাইদুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
৮। আল মামুন জীবন, ঠাকুরগাঁও
৯। নাঈম বিশ্বাস, কুষ্টিয়া
১০। এহসান হাবীব, ময়মনসিংহ
১১। মোঃ রাকিব, কুড়িগ্রাম
১২। আহসান হাবীব তছলিম, খাগড়াছড়ি
১৩। নুসরাত জাহান সোনিয়া, সহকারী শিক্ষক (২০১৮ থেকে সাময়িক বরখাস্ত), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলাপাড়া,পটুয়াখালী
১৪। রিতা দেওয়ান, বাউল শিল্পী, মানিকগঞ্জ
১৫। রহিম শুভ, সংবাদকর্মী
১৬। বায়েজিদ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি, প্রথম আলো
১৭। মোঃ আলফাত হোসেন, সাতক্ষীরা
১৮। রাহাত শান্তনু, অস্ট্রেলিয়া
১৯। আহমেদ সাব্বির, রাজনৈতিক কর্মী‌ ও প্রবাসী, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
২০। সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মী
২১। সাইদুল হক, শিক্ষার্থী, ফেনী
২২। শাহনেওয়াজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম
২৩। রহিম শুভ, সংবাদকর্মী
২৪। সাধনা মহল, রাজনৈতিক কর্মী
২৫। মোহাম্মদ আবুল বাশার, সৌদি আরব
২৬। ফজলে এলাহী, সাংবাদিক
২৭। গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার, আহ্বায়ক, ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক
২৮। দিদারুল ভূঁইয়া, অর্থ সমন্বয়ক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

Scroll to Top