সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে ঘিরে বার বার অশান্ত হয়ে উঠছে ভারতের মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান। বিক্ষোভে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন সকাল থেকে থমথমে পরিবেশ থাকলেও পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে তিনজন নিহতের খবর প্রকাশ্যে আসার পর।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, শুক্রবার ও শনিবার ওয়াকফ আইনকে ঘিরে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুর মিলিয়ে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, জাফরাবাদে নিহতরা বাবা ও ছেলে। তাদের বাড়িতে শনিবার হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।
ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। এ দিন রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও চিত্রটা বদলে যায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
ধুলিয়ান ও সুতির বিভিন্ন এলাকা থেকে শনিবার নতুনভাবে সহিংসতার খবর প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ধুলিয়ানে আজ একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বা এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানান, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে সুতিতেও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনসহ দুইজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
এদিকে, বারেবারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে রাস্তায় বিএসএফ নামানো হয়েছে। কড়া পুলিশি পাহারাও আছে। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে।
সরকারি দফতরের একজন কর্মকর্তা সুতির বাসিন্দা বলেন, ধুলিয়ান এবং সুতি গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। এখানে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, বাস ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে। সোনার দোকান, মিষ্টির দোকান, ব্যক্তিগত বাসভবনে লুট করা হয়েছে। পুলিশ বা প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি। পরে বিএসএফ বাহিনী নামানো হয়। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো নয় বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ, লুটপাট চালানো হয়েছে একাধিক শপিং মলেও।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্পেশাল বেঞ্চে হওয়া সেই মামলার শুনানির পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার আগে অবশ্য আদালত রাজ্যের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিল।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে। কলকাতাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। গত মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের রঘুনাথপুরে সহিংসতা ঘটে। বুধবার সুতি থানা এলাকায়ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের বিক্ষোভের পরে এই দুটি থানা এলাকায় পাঁচ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ওই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
এক দিন পর শুক্রবার আবার পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় বিক্ষোভকে ঘিরে বেশ উত্তপ্ত হয়ে যায় পরিস্থিতি। মুর্শিদাবাদের উমরপুর, সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানে দফায় দফায় সহিংসতা সৃষ্টি হয়।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য তৃণমূলের সরকারকেই দায়ী করেছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেরা।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস শুক্রবার রাতেই একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রতিবাদ মেনে নেওয়া যায়, তবে তাণ্ডব নয়। রাজ্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আইন ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী একটি বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি বলেন, সব ধর্মের সকল মানুষের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনো অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না। দাঙ্গা যারা করছেন তারা সমাজের ক্ষতি করছেন।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকে উত্তেজিত, সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলেছি- আমরা এই আইনকে সমর্থন করি না। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগুও হবে না। তাহলে দাঙ্গা কীসের?