কদরের রাতে মুসলিম হিসেবে বর্জনীয় কী?

কদরের রাতে মুসলিম হিসেবে বর্জনীয় কী?

কদরের রাতে মুসলিম হিসেবে বর্জনীয় কী?

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক

‘শব’ বা ‘লাইল’ অর্থ রাত। আর ‘কদর’ অর্থ মর্যাদা। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর অর্থ ‘মর্যাদার রাত।’ কোনও কোনও আরবি অভিধানের বর্ণনা মতে ‘কদর’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্য’ ধরে এ রাতকে ‘ভাগ্য নির্ধারণ রজনী’ও বলা হয়। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ রজনীতে ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা কদরের ১ থেকে ৫ নং আয়াতে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হলো- হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা এক শান্তিময় রজনী- যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য ‘শবে কদর’ নামে এমন এক পুরস্কার দান করেছেন, যা অন্য কোনও নবীর কোনও উম্মতকে দান করা হয়নি।

সৌভাগ্যমন্ডিত এ রাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে মনগড়া কিছু আমলের প্রচলন ঘটেছে। প্রত্যেক মুমিন- মুসলমানের উচিত হবে মহিমান্বিত এ রজনীতে মনগড়া বিভিন্ন আমল- ইবাদত ত্যাগ করা। শবে কদরের নামাজ নামে মুসলিম সমাজে আলাদা ১২ রাকাত বা ২০ রাকাত নামাজের যে প্রচলন রয়েছে সেটা সম্পূর্ণ বিদআত। এ রাত উপলক্ষে আলাদা কোনও নামাজের বিধান ইসলামে নেই। এ রাতের গোটা সময়ই আপনি চাইলে নামাজে বা অন্য যে কোনও আমল- ইবাদতে কাটাতে পারবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট রাকাতের শবে কদরের কোনও নির্দিষ্ট নামাজ নেই। বিভিন্ন বই- পুস্তকে শবে কদরের নামাজের যে বিধান ও নির্দিষ্ট সুরা পাঠের যে নিয়ম- কানুন বর্ণিত রয়েছে; সেগুলো শুদ্ধ নয়। হাদীস শরীফ থেকে এ ধরনের কোনও নিয়ম বা বিধানের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এসব মনগড়া পন্থা পরিত্যাগ করে বেশি বেশি বিভিন্ন আমল- ইবাদত করা।

অনেক মুমিন- মুসলমান ভাই- বোন এ রাতে কবর জিয়ারত করে থাকেন। কদরের রাতে কবর জিয়ারত করার কোনও সহিহ বর্ণনা রাসুল (সা.) থেকে পাওয়া যায় না। সুতরাং ভালো হলেও লাইলাতুল কদরে কবর জিয়ারত করা থেকে বিরত থেকে অন্য আমল- ইবাদতে মশগুল থাকা অধিক উত্তম হবে।

এছাড়া বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসিলিম দেশে কদরের রাতে দল বেঁধে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে ঘোরাঘুরিকরাসহ উৎসবমুখর বিভিন্ন আয়োজন পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যেক মুমিন- মুসলমানভাইদের একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে, মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরে অহেতুক কোনও আয়োজনে লিপ্ত না হয়ে গোটা রাতের প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিটি এবং প্রতিটি ঘণ্টা কোরআন- সুন্না হয় বর্ণিত বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীতে ব্যয় করার মাঝেই প্রকৃত সৌভাগ্য নিহিত।

পরিশেষ রাসুল (সা.)- এর কিছু হাদীস স্মরণ করিয়ে দেই। ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘শবে কদর’ থেকে বঞ্চিত হলো; সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো।’

আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লাইলাতুল কদর’ পেল কিন্তু ইবাদত- বন্দেগীতে সময় কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই।’
সুতরাং পবিত্র রমজানের মাসে লাইলাতুল কদর আপনার আমার দরজায় কড়া নাড়ছে। এ রাতটিকে খুঁজে আমল- ইবাদতে কাটিয়ে সৌভাগ্যবানদের তালিকাতে নাম লেখাবো নাকি হতভাগা থেকে যাবো; সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরকেই।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top